স্বস্তির যন্ত্র এসি, অসতর্কতায় হতে পারে বিপদ

এসি বিস্ফোরণ
এসি বিস্ফোরণ | ছবি: সংগৃহীত
0

একসময় এসিকে বিলাসিতার প্রতীক হিসেবে ধরা হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এটি অনেকের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণে পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে এসি স্বস্তির আশ্বাস দেয়। তবে স্বস্তির এ যন্ত্রটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে মারাত্মক দুর্ঘটনার হতে পারে। এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

এসি বিস্ফোরণ কেন হয়

এসি বিস্ফোরণের পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। অন্যতম কারণগুলো হলো

রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস লিক

এসিতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস উচ্চ চাপে বাতাসকে শীতল করে। কিন্তু এ গ্যাস যদি কোনোভাবে লিক করে এবং তা স্ফুলিঙ্গ বা আগুনের সংস্পর্শে আসে, তাহলে সহজেই আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব

সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও এসি বিস্ফোরণের একটি বড় কারণ। নিয়মিত পরিষ্কার ও যত্নের অভাবে এসির ভেতরে ময়লা জমে গিয়ে যন্ত্রাংশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এতে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই অবস্থায় চলতে থাকলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা বাড়ে।

ওভারলোড বা অতিরিক্ত চাপ

অতিরিক্ত গরমের সময় এসি অনেকক্ষণ ধরে চালালে কম্প্রেসরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যদি যন্ত্রটি অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পারে, তাহলে এটি বিস্ফোরিত হতে পারে।

ভুলভাবে ইনস্টলেশন

অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে এসি লাগালে বা ভুলভাবে ইনস্টল করলে পাইপলাইনে লিক বা সার্কিট সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এতে ভবিষ্যতে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এসি বিস্ফোরণ |ছবি: সংগৃহীত

এসি একটানা কতক্ষণ চালানো যায়

দীর্ঘ সময় ধরে এসি চালালে কম্প্রেসারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যা ধীরে ধীরে গরম হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই নিরাপদ ব্যবহারের জন্য প্রতি এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর ৫ থেকে ৭ মিনিটের জন্য এসি বন্ধ রাখা উচিত। এতে কম্প্রেসার সাময়িকভাবে বিশ্রাম পায় এবং অতিরিক্ত গরম হওয়ার প্রবণতা কমে। বিশেষ করে পুরোনো এসির ক্ষেত্রে এ সতর্কতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সময়ের সঙ্গে কম্প্রেসারের কর্মক্ষমতা কমে যায় ও তা দ্রুত গরম হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

এসি |ছবি: সংগৃহীত

এসি থেকে পানি পড়ে কেন

এসির ফিল্টারে ধুলা জমা

এসি ফিল্টার ময়লা হয়ে গেলে ঠাণ্ডা বাতাসের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে ইভাপোরেটর কয়েল অতিরিক্ত ঠাণ্ডা হয়ে বরফ জমে যায়, যা পরে গলে গিয়ে অতিরিক্ত পানি তৈরি করে।

পানি জমা হওয়া পাত্রের (ড্রেন প্যান) ত্রুটি থাকলে

এসির ভেতরে যে ট্রেতে পানি জমে, সেটি ফাটল বা মরিচা ধরার কারণে পানি বাইরে পড়ে যেতে পারে। এটি পুরনো এসিগুলোতে বেশি দেখা যায়।

ড্রেইন পাইপ ব্লক হয়ে গেলে

কনডেনসেট ড্রেইন পাইপ ময়লা বা শৈবালে বন্ধ হয়ে গেলে, পানি স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারে না। ফলে পানি ভেতরে জমে গিয়ে এসি থেকে চুঁইয়ে পড়তে থাকে।

এসির ইন্সটলেশন প্রক্রিয়াটি সঠিক না হলে

এসি যদি ঝুঁকে বসানো হয় বা নির্ধারিত ঢাল ঠিক না থাকে, তাহলে পানি ড্রেন লাইনে ঠিকভাবে যেতে পারে না। তা এসির ভেতর থেকেই বাইরে পড়তে থাকে।

এসি থেকে পানি পড়ছে |ছবি: সংগৃহীত

এসিতে কী গ্যাস ব্যবহার করা হয়

যেকোনো ধরনের শীতলীকরণ যন্ত্র যেমন, ফ্রিজ বা এসি কাজ করার জন্য রেফ্রিজারেন্ট নামক একটি বিশেষ গ্যাস ব্যবহার করে। রেফ্রিজারেন্টের মূল কাজ হলো তাপ পরিবহন। এটি যন্ত্রের অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়িয়ে তাপ সংগ্রহ করে কম্প্রেসরের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নেয়।

এসির জন্য কোন গ্যাস ভালো?

ফ্রিজে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্টের বিভিন্ন ধরন রয়েছে যেমন:R22 এবং R410A। R410A অধিক দ্রুত ও কার্যকরভাবে তাপ পরিবহন করতে সক্ষম। যার ফলে এটি শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি দক্ষ। R410A গ্যাসের তাপ শোষণ ক্ষমতাও R22 এর চেয়ে অনেক বেশি। ফলে ঘর বা যন্ত্র দ্রুত ঠাণ্ডা হয়। এছাড়া, R410A পরিবেশের প্রতি তুলনামূলকভাবে সহনশীল, কারণ এটি ওজোন স্তর ক্ষয় করে না এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে গণ্য হয়।

অন্যদিকে, R22 একটি পুরনো ধরনের রেফ্রিজারেন্ট যা ওজোন স্তর ক্ষয় করে এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বর্তমানে এর ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে। এ কারণে আধুনিক শীতলীকরণ যন্ত্রগুলোতে R410A রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

এসিতে ব্যবহৃত গ্যাস |ছবি: সংগৃহীত

এসি নষ্ট হওয়ার কারণ কী কী?

এসি নষ্ট হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ ভুল ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব অন্যতম।

সরাসরি পাওয়ার সুইচ অফ করে দেয়া: এসি চালু থাকা অবস্থায় সরাসরি পাওয়ার সুইচ অফ করে দেয়া যন্ত্রের অভ্যন্তরীণ সার্কিট ও কম্প্রেসারের ক্ষতি করতে পারে।

ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার না করলে: ধুলো-ময়লা জমে যন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং কম্প্রেসার অতিরিক্ত কাজ করার কারণে দ্রুত নষ্ট হতে পারে।

মূল পাওয়ার সুইচ অন রেখে দেয়া হলে: এতে এসি পুরোপুরি বন্ধ হয় না এবং এতে যন্ত্রের কিছু অংশ চাপের মধ্যে থাকতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এসির বিভিন্ন অংশের নাম

আউটডোর ইউনিট (বাইরের অংশ): এসির সেই অংশ যা বাড়ির বাইরে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • কম্প্রেসর
  • কন্ডেনসার কয়েল
  • কন্ডেনসার ফ্যান
  • এক্সপানশন ভালভ

ইনডোর ইউনিট (ভিতরের অংশ): ঘরের ভিতরে থাকা অংশ, যা শীতল বাতাস ছড়িয়ে দেয়—

  • ইভাপরেটর কয়েল
  • ব্লোয়ার ফ্যান
  • এয়ার ফিল্টার
  • ড্রেন প্যান

নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা:

  • রিমোট কন্ট্রোল
  • থার্মোস্ট্যাট
  • পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড)

সংযোগ ব্যবস্থা: এসির বিভিন্ন অংশকে যুক্ত রাখে—

  • কপার পাইপ
  • পাওয়ার কেবল
  • ড্রেন পাইপ

সুরক্ষা ব্যবস্থা: এসিকে সুরক্ষিত রাখে—

  • ওভারলোড প্রটেক্টর
  • টাইম গার্ড

এফএস