শহরের যানজট এড়িয়ে দ্রুত ছোটা: মোটরসাইকেল চালানোর সবকিছু জানা জরুরি

মোটরসাইকেল
মোটরসাইকেল | ছবি: এখন টিভি
5

বর্তমান সময়ে মোটরসাইকেল শুধু একটি যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং এটি অনেকের কাছে এক ধরনের শখ, স্বাধীনতার প্রতীক এবং সময় বাঁচানোর কার্যকর উপায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে মোটরসাইকেল চালানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা ও বোঝা অত্যন্ত জরুরি।

মোটরসাইকেল চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র

লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল চালাতে হলে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি মোটরসাইকেল অবশ্যই বিআরটিএ- তে নিবন্ধিত হতে হবে। লাইসেন্স ছাড়াই মোটরসাইকেল চালালে আইন অনুযায়ী জরিমানা ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার

মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট পরা জীবনরক্ষাকারী অভ্যাস। হেলমেট শুধু চালকের নয়, পেছনের যাত্রীর জন্যও বাধ্যতামূলক। এছাড়া সুরক্ষিত পোশাক, গ্লাভস ও জুতা দুর্ঘটনার সময় আঘাত কমাতে সাহায্য করে।

নিয়ন্ত্রণ জ্ঞান

মোটরসাইকেল চালানো শিখতে হলে প্রশিক্ষিত কারও তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করা উচিত। ব্রেক, ক্লাচ, গিয়ার ও ব্যালেন্স— এ চারটি বিষয় আয়ত্তে আনা না গেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকেই সড়কে ওঠার আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেন না, যা বিপজ্জনক অভ্যাস।

ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা

ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, উল্টো পথে চলা, গতিসীমা অতিক্রম করা বা মোবাইল ফোনে কথা বলা— এসব আচরণ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। মনে রাখতে হবে, একটি মুহূর্তের অসচেতনতাই হতে পারে মৃত্যুর কারণ।

নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ

প্রতিমাসে অন্তত একবার মোটরসাইকেলের ব্রেক, টায়ার, চেইন, লাইট ও ইঞ্জিন তেল পরীক্ষা করা উচিত। নিয়মিত সার্ভিসিং মোটরসাইকেলের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং চালকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

মোটরসাইকেলের গিয়ার পরিবর্তনের পদ্ধতি

গিয়ার পরিবর্তন হলো এক গিয়ার থেকে অন্য গিয়ারে যাওয়া যাতে বাইকের গতি বাড়ানো বা কমানো যায়। গিয়ার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথমেই তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ক্লাচ, থ্রটল এবং গিয়ার শিফটার— এ তিনটি ছাড়া মোটরসাইকেলের গিয়ার পরিবর্তন করা অসম্ভবই বলা চলে।

গিয়ার পরিবর্তনের ধাপ

চালানো শুরু (প্রথম গিয়ার)

ইঞ্জিন চালু রেখে থ্রটল বন্ধ রাখতে হয়। বাম হাতে ক্লাচ পুরোপুরি টেনে পায়ের গিয়ার শিফটার দিয়ে প্রথম গিয়ার দিতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে ক্লাচ ছাড়তে হবে ও একইসঙ্গে থ্রটল একটু একটু করে বাড়াতে হবে। সবশেষ বাইক সামান্য গতি পেলে পুরো ক্লাচ ছেড়ে দিতে হবে।

আপশিফট (গিয়ারে বাড়ানো)

চলন্ত অবস্থায় গিয়ার বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। প্রথমে থ্রটল কমিয়ে দিতে হবে। এরপর ক্লাচ টানতে হবে। গিয়ার শিফটার দিয়ে গিয়ার দিতে হবে। ধীরে ক্লাচ ছেড়ে দিয়ে থ্রটল বাড়াতে হবে। এতে হবে মসৃণ গিয়ার শিফট হবে।

ডাউনশিফট (গিয়ার কমানো)

থ্রটল কমিয়ে দিয়ে ক্লাচ টেনে শিফটার দিয়ে গিয়ারে কমাতে হবে। এরপর ক্লাচ ধীরে ছেড়ে দিয়ে সামান্য থ্রটল দিতে হবে। এতে মোটরসাইকেলে ঝাঁকুনি হয় না।

ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল |ছবি: সংগৃহীত

ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেলের দাম

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। স্কুটার, ই-সাইকেল, মটরসাইকেল ধরনের হয়। ব্যাটারির ক্যাপাসিটি, ব্র্যান্ড ও প্রযুক্তি অনুযায়ী দাম পরিবর্তন হয়।

বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আকিজের ই-বাইক মডেলগুলোর দাম সাধারণত ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত যেতে পারে।

এছাড়া ইনফিনিটি রিভোল্ট আরভি৪০০ মডেলের ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেলের দাম এক লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো।

ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল সাধারণত ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই-তিন লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতে পারে।

ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেলের বাইক কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে—

রেঞ্জ ও ব্যাটারি: এক চার্জে কত কিলোমিটার চলতে পারবে সেটা মুখ্য বিষয়।

চার্জ টাইম ও রিচার্জিং সুবিধা: দ্রুত চার্জিং সুবিধা থাকলে সুবিধা হবে।

মোটর পাওয়ার ও টর্ক: বড় ইঞ্জিন বা মোটর মানে বেশি শক্তি ও ভালো পারফরম্যান্স।

সাপ্লায়ার ও সার্ভিস নেটওয়ার্ক: যে ব্র্যান্ড ভালো সার্ভিস দেয়, সেটি বেছে নিতে হবে।

ওয়ারেন্টি: ব্যাটারি ও মোটরের ওয়ারেন্টি দেখে নিতে হবে।

এছাড়া বাইকটি টেস্ট রাইড দিয়ে দেখতে হবে গিয়ার শিফট মসৃণ হচ্ছে কি না। সাসপেনশন, ব্রেক, চাকা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ভালো আছে কি না নিশ্চিত করতে হবে।

এসএস