বিশ্ব ডাক দিবস: জনগণের সেবা থেকে বৈশ্বিক সংযোগ

আজ বিশ্ব ডাক দিবস
আজ বিশ্ব ডাক দিবস | ছবি: সংগৃহীত
0

আজ (বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে দিনটি। রাজধানীর আগারগাঁও ডাক ভবন প্রাঙ্গণ থেকে সকাল ৮টায় শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘জনগণের জন্য ডাক: স্থানীয় পরিষেবা, বৈশ্বিক পরিসর।’

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ডাককর্মীদের উচ্ছ্বাস

রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন আর স্লোগানে মুখরিত ছিল বৃহস্পতিবার সকালের আগারগাঁও। ডাক ভবন থেকে শুরু হয়ে সংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। ডাক সেবার আধুনিকায়ন, জনগণের সংযোগ এবং টেকসই উন্নয়নে ডাক বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরাই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

ডাক দিবসের শোভাযাত্রা |ছবি: সংগৃহীত

দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে গতকাল (বুধবার, ৮ অক্টোবর) বিকেলে ডাক ভবনে সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, আজ সকাল ৮টায় শোভাযাত্রা ও সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বিকেল সাড়ে ৩টায় ‘আগামীর ভাবনায় ডাক’ শীর্ষক সেমিনার। শুক্রবার সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা, বিকেলে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা দিবসটি উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন, যা ডাক বিভাগের ইতিহাসে নতুন সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আজ বিশ্ব ডাক দিবস |ছবি: সংগৃহীত

ডাকের বৈশ্বিক যাত্রা

১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্নে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন’ (ইউপিইউ)। ১৯৬৯ সালে টোকিও কংগ্রেসে দিনটিকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমানে ১৯০টিরও বেশি দেশ এ ইউনিয়নের সদস্য। ডাক শুধু চিঠি নয়—এটি এখন আর্থিক লেনদেন, ই-কমার্স, ডিজিটাল পেমেন্ট এবং সরকারি সেবা প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে।

পুরনো ডাক বক্স |ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ডাকের রূপান্তর

বাংলাদেশে ডাক বিভাগের যাত্রা ব্রিটিশ আমল থেকে। স্বাধীনতার পর এই বিভাগ দেশের যোগাযোগ, প্রশাসনিক সেবা এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সময় বদলেছে, বদলেছে ডাকের চেহারাও। এখন ডাক বিভাগ পরিচালনা করছে ‘ডাকপিয়ন অ্যাপ’, ‘নগদ’ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং ই-কমার্স ডেলিভারি নেটওয়ার্ক; যার মাধ্যমে প্রতিদিন লাখো পার্সেল পৌঁছাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় ডাককর্মীরা খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের দোরগোড়ায়। প্রমাণ করেছেন, ডাক কেবল বার্তা নয়, এটি মানবিক সেবারও প্রতীক।

বিলুপ্তপ্রায় পেশা রানার |ছবি: রোজায়েল কাজী ফটোস

আগামীর ভাবনায় ডাক

ডিজিটাল যুগে ইমেইল, মেসেঞ্জার বা সোশ্যাল মিডিয়া থাকলেও ডাকের আবেদন এখনও অমলিন। ‘আগামীর ভাবনায় ডাক’ সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাক সেবাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব করতে হবে। সৌরশক্তিনির্ভর ডাকঘর, ডিজিটাল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা এবং আধুনিক লজিস্টিক সিস্টেম হতে পারে ডাক সেবার নতুন দিগন্ত।

ডিজিটাল যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে ডাকে পাঠানো চিঠির আবেদন |ছবি: সংগৃহীত

চিঠির যুগ হয়তো অতীত, কিন্তু ডাকের মানবিক সংযোগ আজও জীবন্ত। ‘জনগণের জন্য ডাক: স্থানীয় পরিষেবা, বৈশ্বিক পরিসর’—এই প্রতিপাদ্যের মধ্য দিয়েই ডাক বিভাগ জানিয়ে দিচ্ছে, প্রযুক্তি বদলায় মাধ্যম, কিন্তু বদলায় না সম্পর্কের চিঠি।

এনএইচ