প্রয়াত লালনশিল্পী ফরিদা পারভীন: গানের ভুবনে থেকে যাবেন আরশিনগরের পড়শি হয়ে

ফরিদা পারভীন
ফরিদা পারভীন | ছবি: সংগৃহীত
0

লালনের গানেই জীবনব্যাপী শেকড়ের সন্ধান করেছেন ফরিদা পারভীন। সময়ের আবর্তনে তাতে ছেদ পড়লো সুরের তানপুরায়। জীবনাবাসন হলো এক সঙ্গীত সাধকের। গুণী এ শিল্পীর চিরবিদায়ে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে নেমে এসেছে শোক। তবুও গানের ভুবনে আরশিনগরের পড়শি হয়ে রইবেন সুরের পাখি ফরিদা পারভীন।

‘আট কুঠুরি নয় দরজা’র প্রকোষ্ঠ পেরিয়ে অন্তিমে উড়াল দিল পাখি। লালন ফকির যে অচিন পাখির তালাশ করে গেছেন, সেই সুরের পাখিই যেন আজ অসীমে।

লালন কন্যা ফরিদা পারভীন। যার কর্মজীবন শুধুই সঙ্গীতময়। লালনের গানেই জীবনব্যাপী করেছেন শেকড়ের সন্ধান। ধ্যানে-জ্ঞানে ধারণ করেছেন লালনের দীক্ষা।

তার কণ্ঠে শুধু কি লালনের গান! মায়াময় সুরে সমান জনপ্রিয় ছিল আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গানও।

লালন সাধক ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বনলতা সেনের শহর নাটোরে। তবে বেড়ে ওঠেছেন কুষ্টিয়ায়। ছোটবেলায় সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয়েছিল মাগুরায় ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে। পরে কুষ্টিয়ায় ওস্তাদ রবীন্দ্রনাথ রায়, মোতালেব বিশ্বাস এবং ওসমান গণির কাছে আধুনিক গানের তালিম নেন। শুরুতে নজরুল সঙ্গীতেই মনোযোগী ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে নাম লেখান ফরিদা পারভীন। তবে ১৯৭৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেয়া শুরু করেন গুরু মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে।

১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন ফরিদা পারভীন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে বাড়ির পাশে আরশি নগর, সময় গেলে সাধন হবে না, মিলন হবে কতদিনে, জাত গেল জাত গেল, তিন পাগলে হল মেলাসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান সঙ্গীত-প্রেমীদের হৃদয়ে মানসপটে অমলিন। অসংখ্য গানের পাশাপাশি এই লালন সাধকের রয়েছে বেশকিছু গানের অ্যালবামও।

ব্যক্তিজীবনে তিনি প্রখ্যাত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফরের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির ঘরে চার সন্তান থাকলেও পরে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

সুরের ব্যঞ্জনায় শ্রোতাদের মন ভাসিয়েছেন ফরিদা পারভীন। জনপ্রিয় সব গানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান গুণী এই লালন সম্রাজ্ঞী। এছাড়া ১৯৯৩ সালে ছায়াছবির গানে সেরা কণ্ঠ-দানকারী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। সেরা সঙ্গীতের জন্য ফরিদা পারভীন ২০০৮ সালে ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার পুরস্কারে ভূষিত হন। নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন ছোটদের গান শেখার স্কুল অচিন পাখি সঙ্গীত অ্যাকাডেমি।

গানের খাঁচা ছেড়ে অচিন পাখির বিদায়ে যে শূন্যতা তৈরি হলো তা হয়তো পূরণ হবার নয়। বর্ষীয়ান এ শিল্পীর বিদায়ে শোকে মুহ্যমান দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

লালন সঙ্গীতের অদ্বিতীয় এ শিল্পীর কণ্ঠে আর বাজবে না সুরের বীণা। তবুও গানে গানে আরশিনগরের পড়শি হয়ে রইবেন সুরের পাখি ফরিদা পারভীন।

ইএ