সুন্দরবনের কূল ঘেষা সাতক্ষীরা জেলার শেষ প্রান্তে মালঞ্চ নদীর তীরে বেড়িবাঁধের পাশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেকে নিয়ে বসবাস সুফিয়া বেগমের। আইলা, আম্পান ও ফণিতে পর পর তিনবার নদীতে বিলীন হয়েছে তার ভিটেমাটি। এবার নতুন আতঙ্ক রিমাল নিয়ে। তারপরও দুর্যোগ এলে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে অনীহা তার।
তিনি বলেন, 'পানি উঠলে বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারি না। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয় আমাদের।'
এই পরিবারটির মতই আতঙ্কে দিন পার করছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার। তবে, ব্যাপক ঝুঁকি থাকলেও দুর্যোগে বাড়িঘর ছাড়তে চান না তাদের অনেকে।
বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে আছে। সবসময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় তাদের।
ষাটের দশকে নির্মাণ করা এখানকার বেড়ি বাঁধগুলো আর পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ জিও ব্যাগের বালুর বস্তা আর রিং বাঁধ দিয়ে কোন রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি গাবুরা ইউনিয়নের চারপাশে নতুন করে বাঁধ নির্মাণে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সেই কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৫ ভাগ। এছাড়া বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'যেইসব সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে সেগুলো জনবান্ধব না। নারীদের একটা আলাদা জায়গা প্রয়োজন হয় সাইক্লোন শেল্টারে। সেটাও নেই।'
আরেকজন বলেন, 'আমরা বিগত আইলার ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটায় উঠতে পারিনি। আবার এই দুর্যোগের কারণে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে।'
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমরা সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি প্রত্যেকের অবস্থান থেকে যেন প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।'
সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রয়েছে ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে ৭১৮টি। এসব সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া ত্রাণকাজে ব্যবহারের জন্য জরুরি অর্থসহ প্রস্তুত আছে মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকরা।