সূচক ও লেনেদেনের সাথে বাড়বে নিজের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার। হবে নিজের ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মুনাফা।
এভাবেই গত কয়েক বছর ধরে আশায় বুক বেধেঁ আছেন কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী। তবে সময় যত যায় মুনাফা দূরস্ত ও লোকসানের পাল্লাই ভারী হয় রোজ। আর তাতে দিন দিন বড় হচ্ছে সব খোয়ানো বিনিয়োগকারীর তালিকা।
দুবছর ফ্লোর প্রাইসে পতন আটকে রাখার পর চলতি বছরের শুরুতে যখন তুলে নেয়া হয় তখন ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে সূচক ও লেনদেন। ফলে সবশেষ সূচক নেমে এসেছে ৫১০০ পয়েন্টের ঘরে। আর লেনদেন নেমেছে ৪০০ কোটি টাকার নিচে।
বাজার চিত্রে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ছিল ৬ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে। আর লেনদেন ছিল ৪৪৪ কোটি টাকা। পরে ১৮ জানুয়ারি বেশিরভাগ শেয়ারের প্রান্ত সীম তুলে নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এতে ফেব্রুয়ারিতে সূচক বেড়ে হয় ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। সেসময় লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা।
সূচক ও লেনদেন কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে যে আশা তৈরি করে তা খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। শুরু হয় ধারাবাহিক পতন। সবশেষ ৯ জুন শেষে সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৭১ পয়েন্ট এবং লেনদেন ৩৫৮ কোটি টাকা। আর গত কয়েক মাসে বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
শেয়ারবাজারের এই দূর্যোগকালীন সময়ে বাজেটে বেশবিছু সুযোগ-সুবিধা চায় বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বাজারে।
তবে এসব দাবির সামন্যই পূরণ হচ্ছে আসছে অর্থবছরে। শর্ত সাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হলেও তা যথেষ্ট মনে করছেন না খাত সংশ্লিষ্টরা। বরং কমানোর বিপরীতে প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কর আরোপ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট বাড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, 'পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের অবস্থা এমনিতেই খুব খারাপ। পুঁজিবাজার খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। সরকারের নতুন প্রস্তাবনায় ৫০ লাখ টাকার উপরে কেউ আয় করলে তাকে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আরও বাড়বে।'
সিডিবিএলের সবশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৮৮৬টি সক্রিয় বিও হিসাবের মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ১৪ হাজার। এসব কোটিপতির অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক। তারাই শুধু ৫০ লাখ টাকার ওপরে মুনাফা করে।
ফলে ক্যাপিটাল গেইনে কর আরোপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল আমিন।
তিনি বলেন, 'বাজেটের অংশীজনরা শুধু চেয়ে যাচ্ছে। এর বিপরীতে বাজারকে তারা কী দিচ্ছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। প্রতি বছর বাজেটের দাবি দাওয়া শুধু তাদের কেন্দ্রিক।'
এছাড়া বাজেটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নামে যেসব সুবিধা চাওয়া হয় তা শুধু প্রতিষ্ঠান ও বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য। তাই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারে আস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
তবে বাজারে আস্থা ও সুশাসনের যে সংকট, কর সমস্যা তার একটা বলে মনে করছেন ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু।
তিনি বলেন,'পুঁজিবাজার একটা স্পর্শকাতর জায়গা। যেহেতু এটা এখন অস্থির তাই এই মুহূর্তে কর যদি বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতার মধ্যে রাখা যায় তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।'
পুঁজিবাজারের খারাপ সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কখনই এগিয়ে আসে না। বরং তাদের ভাবনায় থাকে ব্যক্তিগত সুবিধা। তাই বাজার ভালো করতে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার কথা জানান বিশেষজ্ঞরা।