দিন দিন ডলারের দর বেড়েই চলছে। এর বিপরীতে বিশ্বের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা মূল্য হারিয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, চলতি বছর ১৫০টি দেশের মুদ্রা মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে মূল্য হারিয়েছে। ডলারের এই ঊর্দ্ধমুখী প্রবণতায় এসব দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে। বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
চলতি বছর ডলারের বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা 'ওনের' মান ৭ শতাংশ কমে গেছে। যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ দরপতন। আর মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়ায় দেশটিতে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পণ্য আমদানিতেও খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে দেশটির রিজার্ভ মুদ্রা হুমকির মুখে পড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিবিদ চাই হি ইউ বলেন, ‘ডলারের মান বৃদ্ধি আমদানি পণ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও খাদ্যশস্যের দর বেড়ে যাওয়ায় বেশি অসুবিধায় পড়ছে দেশ। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় মুদ্রা বিনিময় হার কমে গেছে। তাই মনে করি, দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মার্কিন মুদ্রার দর বৃদ্ধি আমদানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে পারে। যদিও ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে, দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভর করে। আর দেশটির মুদ্রার মান পড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ।
ব্যাংক অব কোরিয়ার তথ্যমতে, এ বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন ডলার কমে ৪১৯ থেকে ৪১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে যা সর্বোচ্চ পতন।
মূল্যস্ফীতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিও বিপর্যয়ের মুখে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ইতোমধ্যে দেশটির সরকার 'ডি-ডলারাইজেশন' নীতি বা ডলারের পরিবর্তে ভিন্ন মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিবিদ তৌহিদ আহমেদ বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সরকার ডি-ডলারাইজেশন নীতির কথা বলেছেন। ব্রিকসের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যেতে পারে। পণ্য ও সেবা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহারে সম্মত হওয়া দরকার।’
এদিকে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের পরিস্থিতিও ভালো নয়। ডলারের বিপরীতে যার দর ১৬০-এ ঠেকেছে।
জাপানি অর্থনীতিবিদ কইচি ফুজিশিরো বলেন, বেশিরভাগ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিনির্ভর। পণ্যের আমদানি দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।