পুঁজিবাজার
অর্থনীতি
0

টেনে তোলা যাচ্ছে না দেশের শেয়ার বাজার

অল্প ক'দিনের ব্যবধানে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া ও কিছু কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর ধাক্কা এখনও সামলাতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। সূচক নেমেছে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে, যা গত দেড় বছরে সর্বনিম্ন। কেন এমন হচ্ছে? কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, গুজব আর ফোর্সড সেলই এর বড় কারণ।

ধারণা করে হয়েছিল ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর সাময়িক ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াবে সূচক। কিন্তু মাঝে কয়েকদিন আশা জাগিয়ে ফের চলছে পতনের ধারায়। গত বুধবার (১৩ মার্চ) তা স্পর্শ করল গেল ১৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন সূচক।

দীর্ঘদিন তলানিতে লেনদেন এবং শেয়ারের দাম প্রান্ত সীমায় আটকে থাকার পর চলতি বছরের শুরুতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় মাসের মাথায় ৩৫টি বাদে সব কোম্পানির ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। পরে আরও কিছু কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর তুলে নেয়া হয়। যার ধাক্কা লাগে শেয়ার বাজারে।

এর কিছুদিন পর দুই ধাপে ২৮টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠায় বিএসইসি। সেই সঙ্গে আরও কিছু কোম্পানিকে পাঠানোর বিষয় আলোচনায় আসে। এতে সেসব শেয়ারে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে শিকার হন ফোর্সড সেলের। আর এসব কারণে ফের নেতিবাচক অবস্থায় যায় বাজার। তারসঙ্গে দীর্ঘদিন ফ্লোরে থাকা গ্রামীণ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো'র মতো বড় শেয়ারের নিম্মসীমা তুলে নেয়ার পর পতন হয় সূচকে।

এরই ধারবাহিকতায় ১৩ মার্চ শেয়ারবাজারে ডিএসই'র প্রধান সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। পরের দিন আরও কিছু পয়েন্ট কমে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? কেন ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাজার?

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহমদ রশীদ লালি বলেন, 'যখন ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয় তখন কিন্তু তারা ঐসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছিলেন। কারণ ব্লুচিপ শেয়ারগুলো তখন বিক্রি হচ্ছিল না। বাজার যত পড়তে থাকে ফোর্স সেল তত আসতেই থাকে। তবে ফোর্স সেলটা বিনিয়োগকারীরা করে না। যারা মার্জিন লোন দেয় উনারা এটা করে। যেহেতু ২৫ বছর পুরান হয়ে গেছে। তাই ফোর্স সেল বন্ধে মার্জিনের নতুন আইন প্রয়োজন।'

বাজারের এ পতনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অপেশাদার আচরণকে দায়ী করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

তিনি বলেন, 'একদিকে আইপিও এর মাধ্যমে কিছু টাকা বের হয়ে যাওয়া। সবকিছু মিলিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা যা আসার কথা ছিল, তখন কৃত্রিমভাবে দিয়েছিল। কিন্তু যখন দেখল ধরে রাখতে পারছে না, আবার সেই সাপোর্টটা তারা উঠিয়ে নেয়। অংশীজনরা সবসময়ই বলেছে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে বাজারে সাপোর্ট দিবে। কিন্তু এরকম কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা আসে নাই। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যদি বাজারটাকে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসতো তাহলে মানুষের আস্থা ফিরতো।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কৃত্রিমভাবে সূচক ধরে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে বাজারে, যার ফল হয়েছে নেতিবাচক। তাই বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রাখতে এর স্বাভাবিক গতি প্রবাহে ভরসা রাখার তাগিদ তাদের।

এভিএস