চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শুক্রবার ১১ হাজার ৬০০ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে নোঙর করেছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ বাংলার সৌরভ। রাত আনুমানিক ১২ টায় জাহাজে থাকা ৪২ নাবিক ও ক্রু, ওয়াচম্যানসহ অনেকেই কাজ সেরে তখন ঘুমিয়ে ছিল। বিস্ফোরণের শব্দ ও জরুরি ফায়ার অ্যালার্ম শুনে আতংকিত নাবিকরা উঠে ছুটোছুটি করতে থাকেন। ওই সময় জাহাজে থাকা নিরাপদ না হওয়ায় কতৃর্পক্ষের সিদ্ধান্তে প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ঝাপ দেন সমুদ্রে।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধারকারী সাতটি জাহাজ ও মেটাল শার্ক। চার দলে ভাগ হয়ে তারা উদ্ধার কাজ চালান। ফিশিং বোট, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর জাহাজ ৪৮ জন নাবিক কে জীবিত উদ্ধার করলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর সাদেক নামে একজন স্টুয়ার্ড মারা যান। তবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে সেটা বলতে পারেন নি নাবিকরা।
তবে বাংলার জ্যোতি জাহাজে আগুন লাগার মাত্র চার দিনের মাথায় আরেকটি তেলবাহী জাহাজ বাংলার সৌরভে অগ্নি দুর্ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলতে বা বিঘ্নিত করতে সৌরভে আগুন লাগানো হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। বিশেষ করে জাহাজের সম্মুখভাগে একযোগে চারটি পয়েন্টে আগুন লাগাটা নাশকতার ধারণাকে জোরালো করেছে। জ্যোতিতে আগুন লাগার পরে সবোর্চ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরে অগ্নি দুর্ঘটনা এবং ওই সময় একটি স্পিড বোট পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সব কিছু মিলিয়ে নাশকতা বলে মনে হচ্ছে বলে জানান বিএসসি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই ঘটনার নেপথ্যের কারিগরকে চিহ্নিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
তবে জ্বালানি তেলে আগুন না ধরায় বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। এই দুর্ঘটনায় বিপিসির জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ে প্রভাব পড়বে না। এরই মধ্যে তেল খালাসের জন্য ৩০ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ ভাড়া করেছে বিএসসি। দুর্ঘটনা তদন্তে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি।
মাহমুদুল মালেক বলেন, 'নাশকতাকারীদর চিহ্নিত করতে বন্দরের ভিটিএমএস ও ১৫০ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিরীক্ষণ করা হবে।'
বন্দর চ্যানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বন্দরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থাসহ সব সংস্থার সমন্বিত টিম কাজ করছে বলে জানান বন্দরের মেম্বার মেরিন এন্ড হার্বার কমডোর এম ফজলার রহমান।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মাসুদ ইকবাল বলেন, 'জাহাজের সম্মুখভাগে উপরের অংশে আগুন লাগলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তেল অক্ষত আছে। জাহাজটি নিরাপদে আছে। সাগরে দূষণের সম্ভাবনা নেই। জাহাজটি বর্তমানে বহির্নোঙর নোঙর করে আছে। জাহাজ পাহারায় আছে নৌ-বাহিনীর সদস্যরা।'
বিপিসির আমদানি করা ১৫ লাখ টন ক্রু অয়েল বহিনোঙরে মাদার ভেসেল থেকে খালাস করে ইস্টার্ণ রিফাইনারিতে সরবরাহ করতো বাংলার সৌরভ ও জ্যোতি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুর্ঘটনার পর ৩৭ বছরের দু'টি জাহাজই পরিত্যক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় কতৃর্পক্ষ। তেল খালাসের এটাই ছিল সৌরভের শেষ ট্রিপ।