পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সাশ্রয় ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যয় সংকোচন নীতি মেনে চললে আরও কম টাকায় এ সেতু নির্মাণ করা যেত।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সর্বশেষ চূড়ান্ত ব্যয় এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এখানে প্রায় ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটা থেকে আপনারা যেটা বুঝতে পারেন, এখানে যদি ভালো সরকার থাকতো আমরা হয়তো আরো কম ব্যয়ে পদ্মাসেতু তৈরি করতে পারতাম।’
একনেক প্রকল্পে অনুমোদিত ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতুর দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধিতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। একনেক প্রকল্পের অনুমোদনের পর ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে তিন তিনবার। এতে সেতু নির্মাণের সময়ও লেগেছে বেশি। তবে ব্যয় সংকোচন নীতিমালা মেনে চললে সেতু নির্মাণে আরো কম খরচ লাগত বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা। এদিকে, সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মাসেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৭৭৫ কোটি টাকা।
প্রমত্ত পদ্মা কেবল বিশালতায় নয়, ভয়ংকরও। খরস্রোতা এ নদী তিলোত্তমা নগরী ঢাকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে সবচেয়ে বড় বাধা দূর হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। এতে উপকৃত হচ্ছেন ২১ জেলার ৩ প্রায় কোটি মানুষ।
২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে রঙিন আবহে সেতু উদ্বোধনে দখিনা দুয়ার খুললেও ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে তিনগুণ ব্যয় বৃদ্ধিতে সমালোচনা পিছু ছাড়েনি।
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেলেও পরপর তিনবার ব্যয় বৃদ্ধি হয়। প্রথম সংশোধনী ব্যয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় সংশোধনী ব্যয় বৃদ্ধিতে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও সবশেষ তৃতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
যদিও সেতু বিভাগ ব্যয় বৃদ্ধি ও নির্মাণে সময় বৃদ্ধিতে কারণ দেখিয়েছি ১ তলার সেতু রেলসহ ২ তলায় উন্নিত, ঠিকাদারের আয়ের ওপর কর ও পণ্যের ভ্যাট বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, নদীভাঙন, ফেরিঘাট স্থানান্তর, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণ।
সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সিন্ডিকেটরা পৃষ্ঠপোষকতা পাবে না উল্লেখ করে সেতু উপদেষ্টা বলেন, সরকারি কাজে নতুন উদ্যোক্তাদের সমান সুযোগ থাকবে। জানান সেতু বাবদ কিস্তি ঘাটতি হলেও টোল বৃদ্ধির সুযোগ নেই।
উপদেষ্টা বলেন, ‘টোল থেকে যে আয় হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণে যে ব্যয় হয় এগুলো বাদ দিলে সরকারকে যে ঋণ দেয়া হয় সেটি পরিশোধ করার অর্থ থাকেনা।’
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরো অর্থ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১৬ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা প্রতি অর্থবছরে ৪ কিস্তি করে ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করা হবে। সেতু কতৃপক্ষের তথ্যমতে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।