পরিষেবা
অর্থনীতি
0

এনবিআরকে যেসব পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ

আইএমএফের শর্ত পূরণে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল এনবিআর। লক্ষ্য অর্জনে নানা পরামর্শ দিয়েও সহায়তা করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে নানা উদ্যোগের পরও অর্ধবছরে এসে করতে হয়েছে কাটছাট। এরপরেও রয়ে গেছে বড় ঘাটতি। এরইমাঝে আগামী অর্থবছরের জন্যও ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বড় লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চাচ্ছে এনবিআর।

বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার আগে আইএমএফের শর্ত ছিল তিন অর্থবছরে কর জিডিপির হার ৭.৮ শতাংশ থেকে করতে হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। এরইমাঝে চার দফায় বাংলাদেশ সফরে এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে আইএমএফ। রাজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়েছে প্রশিক্ষণ। নানা শর্ত আর উদ্যোগের পরেও চলতি বছরের মাঝামাঝি এসে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্র কমাতে হয়েছে এনবিআরকে। এরপরও ঘাটতি রয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এরই মাঝে আগামী অর্থবছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে এনবিআর।

চলতি অর্থবছরের জন্য এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা মোট রাজস্বের ৮৬ শতাংশ। আইএমএফের শর্ত পূরণে গেল বছরের তুলনায় লক্ষ্য বাড়ানো হয় ১০ শতাংশ। তবে বড় ঘাটতি থাকায় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এরপরেও ৯ মাসে ঘাটতি প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এরইমধ্যে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে এনবিআর। বাজেটের এক মাস সময় হাতে রেখে আবারও লম্বা সফরে বাংলাদেশে আইএমএফের প্রতিনিধিরা।

এনবিআর বলছে, সাম্প্রতিক সফরগুলোতে নানা পরামর্শসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইএমএফ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খরচ ব্যবস্থাপনা, ফাঁকফোকর ধরা, কর অবকাশ, ই-ফাইলিং, আয়কর প্রণোদনা, ব্যবসাকে উৎসাহ দিতে কৌশল ও পদক্ষেপ, আয়কর ও সামাজিক উদ্দেশ্য প্রসারে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবসায়ীদের কর অবকাশ, রিটার্নের তথ্য যাচাই, বকেয়া মামলা থেকে রাজস্ব আদায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপের মাধ্যমে করজাল বৃদ্ধি, অটোমেশন বাস্তবায়ন করা। আর যেসব খাত থেকে বেশি রাজস্ব আসে সেখানে জোর দেয়াসহ নানা প্রশিক্ষণও দেয় সংস্থাটি।

শুল্কখাতে অব্যাহতি কমানোসহ পরামর্শ দিয়েছে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করার। আর ৫ শতাংশ করহার তুলে দিয়ে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা আয়ের ওপর প্রান্তিক করের হার ১০ শতাংশ করার পরামর্শও দিয়েছে তারা। ফ্রিল্যান্সারদের আয় থেকেও কর না কাটার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে অনুকরণ করে পরামর্শ দেয় আইএমএফ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপ টের সঙ্গে তা নাও মিলতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এনবিআরের নিজস্ব চিন্তাধারায়।

এনবিআর সাবেক সদস্য মো. আব্দুল কাফী বলেন, 'আইএমএফের সব প্রেস্কিপশন শোনা ঠিক না। একই পরামর্শ তারা সারা দুনিয়াজুড়ে দিয়ে বেড়ায়। আমাদের ইন্ডাস্টিকে প্রটেক্শন দেওয়ার ঘোর বিরোধী তারা। আমরা কিন্তু প্রটেকশন দিচ্ছি। এর ফলে অসংখ্য ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে হয়েছে। ব্যক্তিগত কর যেটা বাড়াতে বলেছে। এ থেকে যে রাজস্ব আসবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।'

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের শর্তের দিকে না তাকিয়ে এনবিআরকে আগাতে হবে নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী। আর টেকসই ভিত গড়তে হলে ঋণ পুরণে নয়, বরং সক্ষমতা বাড়াতে হবে হবে অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎসকে শক্তিশালী করতে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অর্ধাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আইএমএফ আজকে আছে। তারপর তিন থেকে সাড়ে ৩ বছর পর তাদের এই তাগিদটা থাকবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যে সম্প্রদাহরণের প্রয়োজনীয়তা সেইটা থাকবে। সেজন্য এটাকে আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা হিসেবে চিন্তা করতে হবে।'

আগামী অর্থবছরে বড় পরিবর্তন আসবে না আমদানি-রপ্তানি আয়ে। তবে, জোর দেওয়া হচ্ছে আয়কর ও মূসক খাতে। যার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে পণ্যমূল্যে। যদিও করযোগ্য আয় কমানো বা বাড়ানো হবে কি-না সে বিষয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নির্ধারণ করেনি এনবিআর।

এসএস