কৃষক কম পেলেও বাজারে পণ্যের দাম বেশি

0

দুর্মূল্যের বাজারে কৃষক ও ভোক্তাদের চড়া সুদ দিতে হয়

আমাদের কৃষকরা সরল, তবে গণিতের সরল অংক তাদের জানা নেই। তারা নিজের ঘামের দাম বা ফসল বোনার খরচ যোগফলে বসান না। বসান না অতি তাপের চাপ অথবা অতিবৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া ঘাম আর মাটির খরচা। ভাগের শেষে বলা যায় কৃষক পিতার মতো বুক পেতে, পিঠ পুড়ে, পেট চালান দেশের মানুষের।

কৃষকরা বলেন, ‘জমিতে এবার যে চাষ হয়েছে, আর আমরা যে দাম পাই তা দিয়ে আমাদের চলে না। আর ফসলও ভালো হয় না।’

কুমিল্লার নিমসার বাজারে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য আসে। মৌসুমের সব দিন সব এলাকায় কৃষিপণ্য সমান হয় না। আর কোন পণ্য হাটে আর পাতে উঠবে তা ঠিক করেন ব্যাপারীরা। এক ব্যবসায়ী বলেন, 'প্রতি গাড়িতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়।'

বাজারে সন্ধ্যা থেকে আসতে শুরু করে ট্রাক। কয়েকশ' ট্রাকের পণ্য নিয়ে রাতভর টানাটানি। চলে দাম দস্তুর, কোন ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকলেও ফোনের বাটনে ট্রাক তার গন্তব্য বদলায়। কারণ লাভের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি অলিখিত এজেন্ডা।

পাইকাররা বলেন, কেজিতে ৫ টাকা খরচ হয়, বিভিন্ন জায়গায় কমিশন কাটার ফলে এ রকম হয়।

দেশের সব আড়তের চিত্র একই। দোকান টেবিলপ্রতি ধরা হয় ঘর। চালান কমিশনভোগী আড়তদাররা। কৃষকের থেকে সরাসরি কেনা স্থানীয় ব্যাপারিরা ট্রাকে করে ঘরপ্রতি পণ্য পাঠান আড়তদারদের কাছে। এখানে বাজার উঠে নামে ফোনে-ফোনে। বাজারে যত মাথা, বাঁধাকপির পাতার মতো প্রতি ভাজে ভাজে এখানে লাভের অংশ যোগ হয়ে বাজার হয়ে ওঠে দুর্মূল্যের।

|undefined

শীতের বাজারে ফুলকপি যতটা হাসে, কৃষকের হাত থেকে ছুটতেই ততই ফসকে যায়। ৫ টাকা কৃষক মূল্যে অদৃশ্য যোগে হয় ১৭ থেকে ২২ টাকা, ৫ শতাংশ কমিশনে দাঁড়ায় ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ৩০ টাকার জলপাই স্থানীয় পাইকারি বাজারে উঠবে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আড়তের ২০ টাকার শিম স্থানীয় পাইকারি বাজারে যাবে ৪০ টাকায়। ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার ব্যবসা হাত ঘুরে আড়তে হিসাব বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা।

দুর্মূল্যের ভাগাভাগির অংকের যোগফলের নাম 'সিন্ডিকেট'। ফলে আমদানি পণ্যের সঙ্গে কৃষকের পণ্যের ভোক্তা মূল্য ফারাক হয় স্বল্প দুরত্বের।

|undefined

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, জাতীয়ভাবে কৃষকের পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। একইসঙ্গে মধ্যসত্ত্বভোগীর অযৌক্তিক খাত কমাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের জন্য একটি কৃষিমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তার নিচে পণ্য বিক্রি করা যাবে না।’

এসএস

আরও পড়ুন: