জ্বালানি তেলের পুরোটাই আসে সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য থেকে। অপরিশোধিত অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড ও মারবান কেনা হয় সৌদি ও কুয়েত থেকে। এছাড়া সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য ট্রেড মার্কেট থেকে ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন ও ফার্নেস ওয়েল কেনা হলেও তেলসমৃদ্ধ কাতার থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল কেনার বড় কোনো চুক্তিতে যায়নি বাংলাদেশ।
কাতারের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জ্বালানি চুক্তি হয় ২০১৭ সালে। দীর্ঘমেয়াদি এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বছরে সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন ও সর্বোচ্চ আড়াই মিলিয়ন টন এলএনজি কিনছে। কাতারের রাশ লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি থেকে যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত কেনা যাবে।
ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খোলাবাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৭০ ডলারে উঠলেও চুক্তির আওতায় কাতার দিয়েছে ১১ ডলারের মধ্যেই। সে বন্ধুত্ব বাড়াতে ২০২৩ সালে প্রতি বছর আরও ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন এলএনজি কেনার আরেকটি চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। যে এলএনজি আসা শুরু হবে ২০২৬ সালে।
এরই মধ্যে ২০ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। বর্তমান সরকারের চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে সবচেয়ে বড় অতিথির আগমন। আর এ সফরকে ফলপ্রসূ করতে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। এক বছরের জন্য ডেফার্ড পেমেন্ট পদ্ধতিতে বাকিতে জ্বালানি সরবরাহের প্রস্তাব দিতে চায় সরকার।
ডলার সংকটের মুহূর্তে এক বছরের জ্বালানি অগ্রিম সরবরাহে কাতার থেকে আশ্বাস মিললে আমদানি মূল্য পরিশোধে চাপ কমবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এমআইএসটির অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, 'যদি এটা সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে করা হয়। আমরা প্রোডাক্টগুলো রপ্তানি করলে পেমেন্টটা কিন্তু এলসির মাধ্যমে পাই। আবার সেটাও সাথে সাথে পাই না।'
তবে জ্বালানি সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বরং নিজস্ব সক্ষমতার দিকেই নজর দেওয়ার পরামর্শ দিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
তিনি বলেন, 'কাতারের সাথে আমাদের যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিটা আছে সেটার পেমেন্ট এক বছর দেরি করে দেয়ার জন্যই হয়তো অনুরোধ করা হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা একটা দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। সেখানে একবার বাকিতে কিছু পেলেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।'
ড. এম শামসুল আলম বলেন, 'বাকিতে এলএনজি কিনলে আর বিল পরিশোধে বিলম্ব করলেই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। আমারা পর্যায়ক্রমে আমদানির ওপর নির্ভর করবো। সুতরাং নিজস্ব সম্পদের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল নীতি অনুসরণ করতে হবে।'
বর্তমানে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পৌনে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বাণিজ্য ছাড়িয়েছে। আর এবার কাতারের আমিরের সফরে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই হবে।