দেশে এখন , শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর: শেষ হয়নি মামলা, কাটেনি নিরাপত্তাহীনতা

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পর তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ালেও তেমন অগ্রগতি হয়নি বিচার প্রক্রিয়ার। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়া নিয়ে যেমন রয়েছে অভিযোগ তেমনি পুরোপুরি দূর হয়নি কারখানার নিরাপত্তাহীনতা। এদিকে, এ ঘটনায় করা হত্যা মামলাটিরও তেমন অগ্রগতি নেই। তবে আইনি জটিলতায় বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি বলে দাবি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজার আটতলা ভবনে কাজ করছিলেন ৫টি পোশাক কারখানার ৪ হাজারের বেশি শ্রমিক। সকাল ৯টায় হঠাৎ বিকট শব্দে তছনছ হয়ে যায় সব।

এরপর শুধু কান্না আর নির্মমতার হাহাকার। যেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসে ১ হাজার ১৩২ জন পোশাক শ্রমিকের নিথর দেহ। এ ঘটনায় যারা বেঁচে যান তাদের অনেকেই আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে যাদের প্রায় সাড়ে ৫৪ শতাংশ শ্রমিক এখনো কর্মহীন।

যাদের হাতের ছোঁয়ায় পোশাক পেয়েছিল নতুন মাত্রা সেসব শ্রমিকদের এমন মৃত্যুতে সাড়া পড়ে যায় বিশ্ব পরিমন্ডলে। প্রশ্ন উঠে শ্রমিকের নিরাপত্তা পোশাক কারখানার মান নিয়ে। দেশ হারাতে বসেছিল বিশ্ব বাজারে পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হারাতে হয় বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা জিএসপি। এরপর দ্রুত এ খাত ঘুরে দাঁড়ালেও হাজারো শ্রমিক হতাহতের ঘটনার ১১ বছর পরও বিচার প্রক্রিয়ার তেমন অগ্রগতি নেই।

দেশের শীর্ষ এ রপ্তানি খাতের অবস্থান বিশ্বে এখন দ্বিতীয়। ২১৫টি সবুজ কারখানা এখন বাংলাদেশে। সবমিলিয়ে ৪ হাজার ১১৪টি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। এসব শ্রমিকের কাছে রানা প্লাজা এখন ইতিহাস আর আক্ষেপ নিয়ে সোচ্চার থাকার দিবস। রয়েছে ক্ষতিপূরণ দেয়া নিয়ে অভিযোগ পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতাও পুরোপুরি দূর হয়নি।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জলি তালুকদার বলেন, 'রাষ্ট্রপক্ষের ব্যাপক গাফলতি রয়েছে। তাদের গাফলতির কারণে আজ পর্যন্ত মামলার কোনো অগ্রতি হয়নি। এই সরকার এবং এ ব্যবস্থা সবসময় মালিকদের পক্ষ নিচ্ছে। যার ফলে সোহেল রানাকে বার বার পদক্ষেপ নিচ্ছে বের করে ফেলার।'

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, 'শ্রমিক তার জীবন মান উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যাদের কারণে এই প্রাণ চলে গেল তাদেরকে বিচারে আওতায় অবশ্যই আনতে হবে। রানা প্লাজা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।'

মামলায় আসামির সংখ্যা আর সাক্ষ্যগ্রহণে জটিলতায় বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ বাবু বলেন, '৫৯৪ জনের সাক্ষীর প্রয়োজন ছিল না। এখানে মূল যে সাক্ষী রয়েছে। যারা ঘটনাস্থলে ছিল বা তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষ্য নিলে মনে হয় ভালো হতো। এত জনের সাক্ষ্য না নিলে মামলা হয়তো দ্রুত শেষ হতো।'

গেল বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে জামিন দেয় হাইকোর্ট। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর জামিন স্থগিত করে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতকে ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর