আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

জ্বালানি ব্যয় না বাড়লেও সবজি-ফলমূল রপ্তানিতে বিমান ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ

চট্টগ্রাম

ছয় মাসের ব্যবধানে আকাশপথে সবজি ও ফলমূল রপ্তানিতে বিমান ভাড়া বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। অথচ এ সময়ে বাড়েনি জ্বালানি বা পরিচালন ব্যয়। দফায় দফায় ভাড়া বৃদ্ধি, উড়োজাহাজে জায়গা স্বল্পতাসহ নানা সংকটে কৃষি পণ্য রপ্তানির বাজার হাতছাড়া হয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশে। এতে গত ৫ বছরে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, এভাবে চলতে থাকলে এক সময় রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের দাবি, কার্গো পরিবহনের ভাড়া ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশি এয়ারলাইন্স।

সবজি ও ফলমূল পচনশীল পণ্য হওয়ায় সাধারণত আকাশপথেই রপ্তানি করা হয়। কিন্তু ফ্লাইটের সংখ্যা কম হওয়ায় বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায়না। ফলে নির্ভর করতে হয় বিদেশি এয়ারলাইন্সের উপর।

সাম্প্রতিক সময়ে উড়োজাহাজে কৃষি পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাড়ায় চরম সংকটে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। তাদের অভিযোগ, ছয় মাসে কয়েক দফায় ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে। বেশি বেড়েছে ইউরোপ ও কানাডা রুটে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশ ভারত ও নেপালে বিমান ভাড়া অনেক কম হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঢাকা লন্ডন রুটে ফেব্রুয়ারিতে ভাড়া ছিল কেজিতে দেড় থেকে দুই ডলার, যা বেড়ে বর্তমানে ৪ ডলার ১০ সেন্ট। একইভাবে কানাডায় সবজি পরিবহনে প্রতি কেজিতে ৩৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৬২৫ টাকায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যেও প্রতি কেজিতে ভাড়া বেড়েছে ৮০ থেকে ১২৫ টাকা। ফলে বিদেশি ক্রেতার চাহিদা ও শর্ত অনুযায়ী সবজি রপ্তানি করতে না পারায় রপ্তানির বাজার হাতছাড়া হয়ে চলে যাচ্ছে ভারত, থাইল্যান্ড নেপাল, ভিয়েতনামসহ প্রতিদ্বন্দী দেশে।

বাংলাদেশ সবজি ফলমূল রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, 'বিমানের কোনো অপারেটিং কস্ট বাড়েনি। আন্তর্জাতিক বাজরে ফুয়েলের কোনো দাম বাড়েনি। তাহলে কেন ২শ’ থেকে ৩শ’ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে।’ 

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, বুকিং নিলেও জায়গার স্বল্পতায় অনেক সময় নির্ধারিত ফ্লাইটে সবজির চালান নেয় না এয়ারলাইন্সগুলো। নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে না পারলে নষ্ট হয় সবজির গুণগতমান। এতে দাম কমিয়ে দেন ক্রেতারা।

২০১৭-১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৮২ মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৭৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমে এক তৃতীংয়াংশে নেমে এসেছে। আর ফ্লাইট কম হওয়ায় চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের ছুটতে হচ্ছে রাজধানীতে। এ কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের।

ভেজিটেবল এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের মো. ফোরকান রুবেল বলেন, 'যেখানে প্রতিদিন ১৮ থেকে ১৯ টন সবজি যেতো মধ্যপ্রাচ্যে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে সেখানে এখন প্রতিদিন ১ থেকে ২ টন যাচ্ছে।' 

সবজি ও ফলমূল রপ্তানিকারক আলমগীর সরকার বলেন, 'বিমান এতো ভাড়া দিয়ে সবজি পাঠানো সম্ভব না।' 

বিমানের কার্গো স্পেস বরাদ্দেও বৈষম্যের অভিযোগ করে রপ্তানিকারকরা বলছেন, সবজি পরিবহনে বিমানের আয় বেশি হলেও তৈরি পোশাককে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে ।

বাংলাদেশ সবজি ফলমূল রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, 'সবজি জাতীয় জিনিস আকাশ পথ ছাড়া অন্য কোনো পরিবহনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তৈরি পোশাককে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে আমাদের সবজির বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।' 

তবে বিমানের ভাড়া অনেক কম দাবি করে বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত হয় এবং বিদেশি এয়ালাইন্সগুলোই এ ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা বোসরা ইসলাম বলেন, 'বিদেশি এয়ারলাইন্সের সাথে সঙ্গতি রেখে আমাকে একটুতো ভাড়া বাড়াতে হবে কারণ তারা মার্কেট লিড দিচ্ছে।' 

৪০টির বেশি দেশে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী বাঙালি দেশীয় সবজির বড় ক্রেতা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর