আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

আমদানির তুলনায় চীনে রপ্তানি কম হওয়ায় বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি

চীনে আমদানির বিপরীতে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক কম হওয়ায় রয়েছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আসছে ৮ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে আজ (বুধবার, ৩ জুলাই) রাজধানীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন অংশীজনরা।

চলতি বছর চীনের সাথে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন থেকেই চীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং বিদেশি বিনিয়োগেও চীনের আধিপত্য সুস্পষ্ট।

বাংলাদেশ চীনের প্রায় ৭০০টি কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ ১০৪ কোটি ডলার। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ মানুষের। এই বিনিয়োগের বেশিরভাগই হয়েছে বিদ্যুৎ, পোশাক এবং অবকাঠামো খাতে।

এদিকে, বাংলাদেশের আমদানির বড় অংশই আসে চীন থেকে। এর পরিমাণ প্রায় ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে তুলা, শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বেশি আমদানি হয়। বিপরীতে রপ্তানি হয় খুবই কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৬৭ কোটি ডলারের পণ্য।

এছাড়া বিভিন্ন দেশের খাতভিত্তিক যে ঋণ সহায়তা রয়েছে, তার মধ্যে চীনের অবদান ৮ শতাংশ বা ৮১১ কোটি ডলার। সবশেষ ২৮ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দেশটি থেকে পাওয়া গেছে ১১৩ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা। আর বাংলাদেশের ৩৫টি বিআরআই প্রকল্পে চীন ঋণ দিয়েছে ৪৪৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে পদ্মা সেতুসহ ৯টি প্রকল্পে দিয়েছে ৮০৮ কোটি ডলারের বেশি।

বর্তমানে চীনের সাথে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া আমদানি-রপ্তানিতে রয়েছে কিছু সমস্যা। আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে সামনে রেখে এ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ।

আলোচনায় উঠে আসে রপ্তানি বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং নির্দিষ্ট খাতের বাহিরে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু বিষয়। সেই সাথে আলোচনা হয় প্রধানমন্ত্রী আসন্ন চীন সফর নিয়েও।

অনুষ্ঠানে চীনে আমদানি ও রপ্তানিতে পোশাক খাতের সমস্যাগুলো কথা তুলে ধরেন বিজিএমইএর প্রতিনিধি।

তিনি বলেন, 'চীনকে সবসময় যেভাবে দেখতাম আমরা সেভাবেই থাকবে? না কি অন্যভাবে তাদের পাব? কারণ আমাদের নিজেদের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে এটা খুব জরুরি বিষয়। যেকোনো জায়গায় চায়না ফেব্রিক্সটাই আগে চলে আসছে।'

এদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে গিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়ার কথা জানান চীনা ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে চীনের বিনিয়োগ ও দেশটির প্রযুক্তি কাজে লাগানোর কথা জানান বিশেষজ্ঞরা।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ য. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'চীন ১০টি প্রধান প্রজেক্টে ইনভেস্ট করছে। ১০টি হাসপাতাল তারা করছে। এগুলো শুধু ঢাকাতেই না, ঢাকার বাইরে সারাদেশেই সবমিলিয়ে ১০টি হাসপাতাল করছে।'

বর্তমানে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। ডলার সংকটের কারণে তা পরিশোধে প্রধানমন্ত্রীর সফরে সময় চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, 'প্রকল্পগুলোর রি-পেমেন্ট যখন শুরু হবে, তখন এগুলো যদি আবার পিছিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অনেকটাই চাপ কমবে। এটা করতে পারলে একটা স্মার্ট মুভ হবে।'

তিস্তা নদী সংস্কারে ১ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সহায়তা পেতে প্রধানমন্ত্রীর সফরে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর