আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

পোশাক শিল্পে কমছে নারী কর্মীর অংশগ্রহণ

তিন দশকের ব্যবধানে দেশে পোশাক শিল্পে নারী কর্মীর অংশগ্রহণ কমেছে অন্তত ২৭ শতাংশ। যার প্রধান কারণ-- বিয়ে, সংসার, কম পড়ালেখা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোমেশনের ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে পোশাক খাতের পরিবেশ । প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা না পেলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়বে না নারী কর্মীদের।

চট্টগ্রামে ফাতেমা বেগম ক্লাস সিক্সে পাস করেই, পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। মাত্র ৪০০ টাকা বেতনে হেলপার হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। চাকরির পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। বিয়ের পর কোলজুড়ে একে একে তিন সন্তান এলেও এখনো অদম্য ফাতেমা।

২৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ফাতেমা এখন একটি কারখানার স্যাম্পল বিভাগের ইনচার্জ। এই সময়ে বেতন বেড়েছে ১৩৩ গুণ। নানা প্রতিকূলতা পেরুনো ফাতেমা, পোশাক খাতের লাখ লাখ শ্রমিকের মধ্যে এক সফল নারীর প্রতিচ্ছবি।

সনেট টেক্সটাইলের স্যাম্পল ইনচার্জ ফাতেমা বেগম বলেন, 'কাজ শিখার ইচ্ছা ছিলো। কারণ কাজ জানলে বেতন ভালো পাওয়া যায়। তাই আমি কাজও শিখলাম বেতনও পাচ্ছি। সবদিক দিয়ে আমি সফল।'

তবে কাটিং, ফিনিশিং, লাইন, কোয়ালিটি ও ফ্লোর ইনচার্জ পদে ফাতেমাদের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রশ্ন আসে এক সময়ের নারীনির্ভর এই খাতে কেন পিছিয়ে নারীরা।

একসময় প্রোডাকশন ম্যানেজার পদে কিছু নারী থাকলেও পোশাক শিল্পের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে নারী কর্মী নেই বললেই চলে। বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত ২ হাজার ৬০০ কারখানায় সুপারভাইজারের সংখ্যা ৮২ হাজার। এর মধ্যে নারী সুপারভাইজার মাত্র হাজারের কাছাকাছি । যা মাত্র সাত শতাংশ।

কর্মরত নারীরা বলছেন, 'কর্মক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দুটোই দরকার। সাংসারিক ঝামেলা এবং দীর্ঘ কর্মঘণ্টার পর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই ইচ্ছা থাকলেও উপরে উঠার সিড়ি সহজ নয়।'

কোয়ালিটি সুপার ভাইজার রুনা আক্তার বলেন, 'কাজের দক্ষতার পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতার দরকার। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দুটোই কম।'

নারী কর্মীরা বলেন, যারা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে তারা চাইলেও ইনচার্জ ম্যানেজার হতে পারবে না।

বিজিএমইএ বলছে, পোশাক কারখানা শুধু সুঁই সুতার কাজ নয়। ক্রেতাদের সাথে কথা বলাসহ প্রতিটি ধাপে কাজ বুঝতে হয়। সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম হওয়ায় নারী কর্মীরা শীর্ষ পদে যেতে পারছেন না।

সনেট টেক্সটাইলের পরিচালক গাজী মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, '৪-৫ বছর কাজ করার পর অনেকের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারা ঝরে পড়ছে। আবার যারা বিয়ের পরেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা সংসারের চাপে উপরের দিকে উঠার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলছে।'

আশঙ্কার বিষয়, নব্বইয়ের দশকে এই খাতে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ নারীকর্মী থাকলেও এখন তা কমে ৫৩ শতাংশে ঠেকেছে। শিল্প মালিকরা বলছেন, ৩৫ বছরের পর নারীরা আর এই সেক্টরে থাকছেন না। কিছু টাকা জমলে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। ঝুঁকছেন কুটিরশিল্প বা বিকল্প কর্মসংস্থানে ।

আইএলও স্ট্যান্ডিং কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এ এন এম সাইফুদ্দিন বলেন, 'দুইবছর আগেও নারীদের সংখ্যা বেশি ছিল। দশবছর একজন নারী চাকুরি করার পর সে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। সেখানে সেলাই মেশিন কিনে নিজের মতো কাজ করছে।'

ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, নারী বান্ধব পরিবেশ নেই সব কারখানায়। সেই সঙ্গে কাজের চাপ ও মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে অনীহাসহ নানা কারণে এই খাত থেকে চলে যাচ্ছে অনেক নারী কর্মী।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, 'দেশে বিদ্যমান শ্রম আইনের সঠিক কার্যকর করা হচ্ছে না। বেতন বেশি হলে সার্ভিস বেনিফিট বেশি দিতে হবে বিধায় মালিকরা তাদের বের করে দিয়ে নতুন লোক নিচ্ছে।'

বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানায় বর্তমানে প্রায় ৩৩ লাখ শ্রমিক কাজ করছে।