নির্দেশনায় বলা হয়, এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য অর্থের সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে সুদহার নির্ধারণ করা হবে।
পাশাপাশি ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদহার ও আমানতের সুদহার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকভেদে নির্ধারিত সীমার মধ্যে সুদ বা মুনাফার হারে ১ শতাংশ পর্যন্ত তারতম্য করা যাবে।
২০২০ সালে বাংলাদেশে যখন মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ, ঠিক তখন আওয়ামী সরকারের আমলে ব্যবসা বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারণ করা হয় নয়-ছয় সুদ হার। এরপরই দেশে বাড়তে থাকে বিনিয়োগ। যার প্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকে জিডিপি ও বিনিয়োগের সূচক।
আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের তারল্যে। এদিকে যেমন নয় শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বড় করেছে। অন্যদিকে আমানতের হার কম হওয়ায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়া বা জমা রাখা কমিয়ে দেয় গ্রাহক। সেই সাথে বেড়ে যেতে শুরু করে মূল্যস্ফীতি।
এমন অবস্থায় ডলার সংকটে যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত হয়। তখন সংস্থাটির দেয়া শর্ত পূরণে ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখীতে লাগাম টানতে ২০২৩ সালের জুন মাসে স্মার্ট ভিত্তিক সুদ হার পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হত। কিন্তু এতেও কোনও কাজ হচ্ছিল না মূল্যস্ফীতি কমাতে। বরং চাহিদার ভিত্তিতে ধারাবাহিক ভাবেই বাড়াতে হয়েছে আমানত ও ঋণের সুদ।
এরপরও তারল্য সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিল না ব্যাংকগুলো। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে টাকা দেয়া বন্ধ করলে চাপ পড়ে বেসরকারি ব্যাংকে। আর মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়ে যায় দুই অংকের ঘরে।
ঠিক এমন সময় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দু মাস পর পুরোপুরি বাজার ভিত্তিক সুদ হার নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এখন থেকে চাহিদার ভিত্তিতে ঋণ ও আমানতের সুদ নির্ধারণ করবে ব্যাংকগুলো। যা এতদিন একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নির্ধারণ হয়ে আসছিল। রোববার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বিষয় জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশনায় বলা হয়, বাজার বহির্ভূত হারে ঋণ, লীজ ও বিনিয়োগের উপর সুদ বা মুনাফা আরোপ না করা এবং আমানতের ওপর সুদ/মুনাফা প্রদান না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ঋণের মঞ্জুরীপত্রে সুদহারের ধরণ অর্থাৎ তা অপরিবর্তনশীল বা পরিবর্তনশীল কি-না উল্লেখ থাকতে হবে।
পরিবর্তনশীল সুদহারের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের ৬ মাসের মধ্যে মঞ্জুরীপত্রে নির্ধারিত সুদহার বৃদ্ধি করা যাবে না। পরবর্তী সময়ে প্রতি ছয় মাস অন্তর বাজার সুদহারের ভিত্তিতে সুদহার পুনঃনির্ধারণ করা যাবে।
অন্যদিকে কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলে যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, উক্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর নিয়মিত সুদহারের অতিরিক্ত সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে। তবে দন্ড সুদ আরোপের ক্ষেত্রে গ্রাহকভিত্তিক পরিচালক পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও ঘোষিত সুদহারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ বা আদায় করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ, বিশেষ তহবিল, পুনঃঅর্থায়ন এবং প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
পাশাপাশি ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো তাদের প্রদত্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে মুনাফা নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৪১(২) (ঘ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।
আর এ নির্দেশনা জারির ফলে স্মার্ট সুদের আগের প্রজ্ঞাপনগুলো বাতিল করা হয়েছে।