আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬), গত ২০ মার্চ দেশের রিজার্ভ ছিল ১৯.৯৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার। তা সর্বশেষ ২৭ মার্চে এসে কমে হয়েছে ১৯.৪৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে। সে হিসাবে কমেছে দশমিক ৫৩ বিলিয়ন বা ৫৩ কোটি ডলার।
পাশাপাশি ২৭ মার্চ শেষে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪.৮১ বিলিয়ন ডলার। যা ২০ মার্চ ছিল ২৫.২৪ বিলিয়ন ডলার। হিসাবে এক সপ্তাহে গ্রস রিজার্ভ কমেছে দশমিক ৪৩ বিলিয়ন বা ৪৩ কোটি ডলার।
এর আগে গত ৬ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত দুই সপ্তাহে গ্রস রিজার্ভ কমে ১.০৯ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী, কমে ১.১৬ বিলিয়ন ডলার।
বরাবরই ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজান মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। কিন্তু চলতি মার্চে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ শ্লথ। চলতি মাসের শুরু থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের। এরপর গত সপ্তাহেও রেমিট্যান্স প্রবাহ তেমন একটা বাড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সোয়াপ পদ্ধতি চালু করার পর রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছিল। এখন পর্যন্ত সোয়াপের মাধ্যমে বাজার থেকে ১৭৬ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিপরীতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য যুক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। বিদেশী ঋণ ও আমদানি দায় পরিশোধের কারণে এখনও রিজার্ভের ক্ষয় বন্ধ হচ্ছে না। দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতির পরিমাণও ক্রমাগত বাড়ছে।
রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের বাজার এখনো অস্থিতিশীল। ব্যাংকাররা বলছেন, কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময় হার ব্যাংকের তুলনায় বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন বেশি।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, গত কয়েক মাস ধরেই দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ ভালো। আশা করা হচ্ছে, রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চলতি মাসে আরও বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে। দেশের রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আবার এ মুহূর্তে ডলারের বাজারও বেশ স্থিতিশীল।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষে রিজার্ভ ছিল ২৫.৭৬ বিলিয়ন ডলার। সে সময় বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ দাঁড়ায় ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ছিল ১৯.৯৪ বিলিয়ন ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়, বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশের রিজার্ভে যার প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে ওই সময় রিজার্ভ বাড়ানো হয়। এরপর সংকটের কারণে ২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর ফলে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমে গত নভেম্বর শেষে ১৯.৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। এরপর আবারও বেড়ে ডিসেম্বরে ২১.৮৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল, তবে চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে আবার কমে ১৯.৯৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়।