বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য ও ব্যয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্স

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি | ছবি: সংগৃহীত
0

আন্তর্জাতিক রুটে বিদেশি এয়ারলাইন্সের আধিপত্য আর অভ্যন্তরীণ রুটে বাড়তি ব্যয়, দুই চাপে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি তিন এয়ারলাইন্স। প্রতিযোগিতার এই বাজারে গত দুই দশকে বন্ধ হয়েছে নয়টি এয়ারলাইন্স। এখনো যাত্রী সেবা নিয়ে যেমন আছে অভিযোগ তেমনি এয়ারলাইন্সগুলোরও আছে উচ্চ পরিচালন ব্যয়ের বেড়াজালে আটকে রাখার অজুহাত।

আকাশে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, কিন্তু দেশিয় বিমান খাতের টিকে থাকার লড়াই এখনো তীব্র। দেশে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ ছাড়াও বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার এস্ট্রা এই তিনটি এয়ারলাইন্স নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

উচ্চ পরিচালন ব্যয়, জ্বালানি দাম, ডলার সংকট এবং বিদেশি এয়ারলাইন্সের আধিপত্য, বেশ কয়েক বছর ধরে এসব মোকাবিলা বেসরকারি এয়ারলাইন্সের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার সেবা নিয়েও আছে যাত্রীদের নানা অভিযোগ।

যাত্রীরা জানান, প্লেনগুলো কিছুটা পুরাতন। তাছাড়া যাত্রীদের ব্যাগ এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয় যে এসকল ব্যাগ আর বেশিদিন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না৷ এছাড়াও, বেশি দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগও করেছেন কোনো কোনো যাত্রী।

বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক রুটে বিদেশি এয়ারলাইন্সের বাজার প্রায় ৮০ শতাংশ, বাকি মাত্র ২০ শতাংশ কেবল দেশি সংস্থার বাজার। আর এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনের দখলে। বছরে প্রায় ২০লাখের বেশি যাত্রী এখন দেশিয় সংস্থার ফ্লাইটে ভ্রমণ করছে। প্রতিবছরই ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই যাত্রী সংখ্যা। বেবিচক বলছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ৪টি দেশিয় এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ রুটে ১১৪টি, আন্তর্জাতিক রুটে ৩৬টি এয়ারলাইন্স ১৪৭টি ফ্লাইটসহ ২৫টি কার্গো সেবা পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়াও বিগত ২৫ বছরে আকাশে ওড়ার অনুমোদন ১২টি এয়ারলাইন্স যার মধ্যে ৯টি এয়ারলাইন্সই বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন:

বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩টি দেশিয় এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার এবং বিমান বাংলাদেশের কাছে জুন ২০২৫ পর্যন্ত অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মিলে ৭হাজার কোটি টাকারও বেশি পাওনা বেবিচক।

কেন এয়ারলাইন্সগুলো লোকসানে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুল পরিকল্পনা, উচ্চ হারের অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বিপুল অর্থের জোগান না দিতে পেরেই মূলত ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। আর যে তিনটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে, তারাও রয়েছে ঝুঁকিতে।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু সমস্যা এখানে আছে। বিশেষ করে চার্জগুলো যেমন অ্যারোনটিক্যাল চার্জগুলো পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বেশি পে করতে হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো লজিকাল এমাউন্ট নির্ধারণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত একটা এয়ারলাইন্স সাসটেইন করা অনেক কঠিন।’

তবে বিগত বছরগুলোতে জেট ফুয়েলের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে যে অভিযোগ ছিলো সেটি সমন্বয় করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও টেকসই খাতের জন্য সরকারি সহায়তার দাবি তাদের।

অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মফিজুর রহমান বলেন, ‘যে সংস্থা আমাদের ফ্যাসিলিটি এড করার কথা যাতে সিভিল অ্যাভিয়েশন গ্রো করে সেটা হলো বড় প্রতিবন্ধক। নিয়ম কানুনের বেড়াজালে এয়ারলাইনকে গ্রো করতে দিচ্ছে না। তেলের দাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে বেশি। এটা আগেও ছিলো। মে মাস থেকে মোটামুটি এটা বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য হয়েছে।’

উচ্চ পরিচালন ব্যয়ের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা এখন কেবল দেশিয় সংস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো আধুনিক সেবা ও বৈদেশিক রুট সুবিধা দিয়ে যাত্রী টানছে। ফলে দেশিয় সংস্থাগুলোকে বাজারে টিকে থাকতে আরও কৌশলগত হতে হচ্ছে।

এয়ার এস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ বলেন, ‘একটা ইউরোপিয়ান এয়ারলাইন যে খরচে একাউন্ট লিজ নিতে পারে বাংলাদেশ থেকে সে একই লিজ নিতে গেলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি পে করতে হয়। কান্ট্রি রিস্ক এসেসমেন্ট এবং ডলার বনাম টাকার ভালনেরাবিলিটির জন্য এমন হয়।’

যাত্রী সংখ্যা প্রবৃদ্ধি নতুন করে দেশিয় অ্যাভিয়েশন খাতে আশার আলো দেখালেও এয়ারলাইন্সগুলোর যথাযথ যাত্রী সেবা মানোন্নয়ন না হলে এই পথ থেকে উত্তরণ কঠিন হবে।

ইএ