শোরুমে গাড়ি রাখার খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই আমদানির পর বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বন্দরের শেডেই ফেলে রাখেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে গাড়ির গুদাম হিসেবে ব্যবহারের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
মামলা জটিলতাসহ নানা কারণে এসব গাড়ি নিলামে উঠে না যথাসময়ে। এতে বন্দরের শেডে জায়গার অপচয়ই শুধু নয় আটকে যায় সরকারের রাজস্ব।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেড পরিদর্শন করে পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা। নতুন কার শেডে পড়ে থাকা গাড়ি খালাস কিংবা নিলামে তুলতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই অকশনগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং অন্যান্যগুলো হবে। তো আমি মনে করি ঠিক আছে, আমি অতটুকু সময় দিতে রাজি আছি। যদি না হয় চেয়ারম্যানকে আমি বলেছি কি অ্যাকশন নেয়া যাবে সেটা আমরা নেব।’
এরপরই শুরু হয় নিলামের তোড়জোড়। খবর পেয়ে তৎপর আমদানিকারকরাও। এরই মধ্যে ১৩টি গাড়ি শুল্ক কর দিয়ে ডেলিভারি নিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে আবেদন করেছেন আমদানিকারকরা।
বিলুপ্ত সংসদের এমপিদের আমদানি করা ৪৫টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে একটির শুল্ক দিয়ে সম্প্রতি ডেলিভারি নিয়ে গেছেন গত নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত এক এমপি।
তবে, নোটিশের পরও কোনো সাড়া নেই বাকিদের। এ অবস্থায় ভিত্তি মূল্য নির্ধারণের পর জানুয়ারি মাসেই নতুন শেডে থাকা বাকি ৯০টি গাড়ি নিলামে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন বলেন, ‘যেহেতু ৭০টি গাড়ির ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আমরা এগুলোর ভ্যালুর জন্য শুল্কায়ন গ্রুপের কাছে পাঠাবো। ভ্যালু আসলে এগুলো নিলামে তুলে দিব।’
বিডারদের অভিযোগ আমদানিকারকদের রিট নিষ্পত্তিতে কাস্টম হাউজের আইন শাখা নিষ্ক্রিয়। ফলে বিপুল ব্যয়ে আমদানি করা গাড়িসহ অনেক পণ্যই বন্দরের শেডে বছরের পর বছর পড়ে থেকে নষ্ট হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, মামলা তো কাস্টমের বিরুদ্ধে। কাস্টমের তো আইন শাখা আছে, ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আছে। উনি যেয়ে যদি এটার ফলো আপ করতো, হয় আমদানিকারকদের দেবে না হয় বিডারদের দেবে। মোটামুটি রাজস্ব সরকার পাবেই ।’
নিলাম কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে এ সংক্রান্ত আইন ও প্রক্রিয়া সহজ করার আহবান সিএন্ডএফ এজেন্টদের।
চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘নিলামের যে পদ্ধতি বা আইন সেটাকে আরো সহজীকরণ করা প্রয়োজন। একটা গাড়ির দাম ছিল ১ কোটি টাকা, পড়ে থাকতে থাকতে সেটা এখন ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে হবে, কিন্তু আইনের কারণে কাস্টম কর্তৃপক্ষ তাতে অনুমতি দিতে পারছে না ।’
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যে কেউ গাড়ির অনলাইন নিলামে অংশ নিতে পারবে। এজন্য জমা দিতে হবে টিআইএন, এনআইডি ও আয়কর সনদ। তবে অনলাইনের পাশাপাশি পে অর্ডারের কপিও টেন্ডার বাক্সে জমা দিতে হবে। যদিও ভালো সাড়া পেতে অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি নিলামের দাবি বিডারদের।