দিনের আয় করতে হয় দিনেই। সকাল থেকে কাজ আর দিনের শেষে যা উপার্জন তাই দিয়ে চলে সংসার। এমনই একজন শ্রমজীবী মুজিবুল হক। তবে চলমান পরিস্থিতিতে কমেছে আয়। করতে হচ্ছে ঋণ।
শ্রমজীবী মুজিবুল হক বলেন, ‘আগে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছি। জীবন ভালো মতোই চলছিল। কিন্তু এখন ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে বুড়িগঙ্গায় জাল ফেলছেন কেউ কেউ। কাজ নেই অথচ পরিবারের প্রিয় মানুষ গুলো তাকিয়ে কর্তার দিকে। কামরাঙ্গীর চরের বিয়ে বাড়ির বাবুর্চি মতিন তাই কারফিউতে হাতে তুলে নিলেন জাল। ঝাঁকি জাল ফেলছেন গঙ্গা বুড়িতে।
বাবুর্চি মতিন বলেন, ‘কারফিউ চলতেছে সব জায়গায়। কাজ বন্ধ। বিয়ে-সাদি তেমন হচ্ছে না। পেট বাঁচানোর দায়ে ঝালে নিয়ে নদীতে নেমেছি।’
কারফিউ তাই বন্ধ খেয়া পারাপার। তবু মাঝিদের ঘাটে এসে অপেক্ষা। নেই জমানো অর্থ যা দিয়ে চলা যাবে কয়েক সপ্তাহ। তাই অনেকেই চেষ্টা চালাচ্ছেন নৌকা নিয়ে ঘাটে ভেড়ানোর।
মাঝিদের একজন বলেন, ‘আমরা একা একা ঘাটের মধ্যে বসা থাকি কোনো লোকজন নেই। কাউকে নদী পারাপার করতে পারছি না উপার্জনও নেই।’
কাজ করতে না পারলে শূন্য হাতে ফিরতে হবে বাড়ি তাই কাজের আশায় কর্মস্থলের আশেপাশে দারিদ্র শ্রমজীবী মানুষের আনাগোনা।
বিবিএসের প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। আর চরম দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যার বড় একটা অংশ দিন মজুর। তাদের চোখে মুখে কষ্টে ছাপ। জানতে চাই, এই পরিস্থিতিতে কাজের অনিশ্চয়তা কতটা কঠিন করে তুলছে শ্রমজীবী মানুষের জীবনেকে?
কাজের খোঁজে গত কিছুদিন দাঁড়িয়ে থেকেই সময় পার করেছেন অনেক দিন মজুরের। নেই কাজ তবু প্রতিদিন রাজধানীতে ভিড় করেন তারা।
সীমিত ভাবে চলছে গণপরিবহন। এই সীমিত সময়ে মিলছেনা সবার কাজ। রাতের পালায় গাড়ির চালক বেকার, সাথে বেকার হয়েছে হেল্পার। না খেয়ে রাত কাটাচ্ছেন অনেকেই।
চালক একজন বলেন, ‘খাবারের টাকা নেই। গতকাল বাড়ি থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে এসে আজকে খাবার খেলাম।’
আরেকজন চালক বলেন, ‘একদিন গাড়ি চললেও এই টাতা দিয়ে সংসারও চলে নিজের পেটও চলে না।’
অক্লান্ত পরিশ্রমে যাদের দিন কাটে তাদের সব সয়ে যায় কিন্তু সহ্য করার সাধ্য নেই ক্ষুধা। পরিবারের জন্য এখন অনেকেই যে কোন কঠিন কাজই করতে রাজি হচ্ছেন। কাজ না থাকায় কম মূল্য শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ পরিস্থিতি সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে। তাই এই ১৮ শতাংশ মানুষের কাজের নিশ্চয়তা চান তারা।