কৃষি
অর্থনীতি
0

এক দশকে দেশে গবাদি পশুর উৎপাদন বেড়েছে ১৪২ শতাংশের বেশি

দেশে গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়ছে। সফলতা পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণ ব্যবসায় নামছেন নতুন নতুন খামারি। এক দশকে ১৪২ শতাংশের বেশি গবাদিপশুর উৎপাদন বেড়েছে। তবে জমি স্বল্পতা ও চারণভূমির অভাব রয়েছে। যে কারণে পশুর সংখ্যা সীমিত রেখে দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়াতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।

গাড়িয়ালের পথ পানে আর চেয়ে থাকে না কেউ। কারণ, কালের গহ্বরে হারিয়েছে গ্রামীণ বাহন এই গরুর গাড়ি। যন্ত্রের বিকাশে প্রয়োজন ফুরিয়েছে কৃষকের লাঙ্গল, জোয়াল, মই ও হালের গরুর।

কৃষি অর্থনীতির এ বাহনটি জৌলুস হারালেও কমেনি গোমাংসের চাহিদা। তাই তো গৃহস্থের গোয়াল থেকে গরুর স্থান এখন খামারে।

বিদেশফেরত শুক্কুর আলী কয়েক বছর আগে একটি গাভি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এখন তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টি গরু রয়েছে। এদের নিয়েই সুদিনের স্বপ্ন দেখেন তিনি।

শুক্কুর আলী বলেন, ‘প্রতিদিন ৩ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করি। অর্ধেক টাকা দিয়ে গরুর খাবার কিনতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে যায়। আর বছর শেষে ভালো দামে গরুও বিক্রি করা যায়।’

দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গরু পালন ব্যবসা। স্থাপন হচ্ছে আধুনিক খামার। এই যেমন, দুই একর জায়গা নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ফিট অ্যান্ড ফ্রেশ এগ্রো গড়ে উঠেছে। যেখানে ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ২টি গরু নিয়ে খামার শুরু হলেও এখন সেখানে ৬শ’র বেশি গরু রয়েছে।

গবাদি পশুর দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়াতে দেশি গরুকে উন্নত জাতের বীজ দেয়া হয়, জন্ম নেয় সংকর জাতের গরু। যাদের কয়েক ধাপে মোটাতাজা করা হয়।

শুধু ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে দুই হাজার খামার রয়েছে। আর সারাদেশে গবাদিপশুর খামারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরের ব্যবধানে দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৪ লাখ। অন্যদিকে দশ বছর আগে মাংস উৎপাদন ছিল ৪৫ লাখ টন, এখন সে পরিমাণ ৮৭ লাখ টন। সে হিসাবে এক দশকে দেশে মাংস উৎপাদন ৪২ লাখ টন বেড়েছে। অর্থাৎ পশুর সংখ্যার চেয়ে বেশি বাড়ছে পশুর মাংস উৎপাদনের পরিমাণ। যার বড় অংশই গরু থেকে আসছে।

পশু পালনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ জমির স্বল্পতা। তাই পশুর সংখ্যা সীমিত রেখেই জাত উন্নয়নের মাধ্যমে কয়েকগুণ দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে তিন হাজার ৮শ' ৮৫ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান কারিগরি সমন্বয়ক ড. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, বিপণন এবং উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, মাংসের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

এতো চেষ্টা, বাড়তি উৎপাদনসহ নানা সূচকে এগিয়ে থাকলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। বেশি দামেই গরুর মাংস কিনতে হয় ভোক্তাদের। বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে জোর দেন উৎপাদন খরচ কমানো ও মাংসের পরিমাণ বৃদ্ধির ওপর। ভুষি, খৈল, চিটাগুড়, লবণ-ভিটামিন মিশ্রণসহ একটি সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলা জরুরি। তবে দানাদার খাবারের চেয়ে আঁশজাতীয় খাবার বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কাঁচা ঘাস খাওয়ালে খরচও কম হয়।

জনবহুল দেশে মানুষের খাবার উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় গবাদিপশুর জন্য ৭০ শতাংশ ঘাস উৎপাদন করা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সাধারণ ঘাস চাষ না করে অধিক উৎপাদনশীল ঘাস, ভুট্টা ও সাইলেজের চাষাবাদ বাড়লে, কমবে পশুর উৎপাদন খরচ। তখনই কম দামে মাংস সরবরাহ সম্ভব হবে। তবে মধ্যস্বত্তভোগীদের প্রভাব কাটিয়ে বিক্রি নিশ্চিত করাটা এক্ষেত্রে জরুরি বলে মনে করেন খামারি ও ভোক্তারা।