দেশে এখন
অর্থনীতি
0

রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বেইলি রোড ট্রাজেডির প্রভাব

বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার প্রভাব রাজধানীর রেস্তোরাঁ ব্যবসায় পড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের পর দুই শতাধিক রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। আর খোলা থাকা রেস্তোরাঁয় কমেছে ক্রেতা।

রসনার ঘ্রাণ নেই, তাই মানুষের আনাগোনাও নেই। কদিন আগেও যেখানে হাজারো ভোজনপ্রেমীর পদচারণা ছিল, সেই বেইলি রোডের নবাবী ভোজের ফটকে এখন সিলগালা।

স্বাদের টানে এখনো অনেকে আসেন নবাবের দরজায়। তবে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় তাদের। এক ক্রেতা বলেন, ‘এই নববী ভোজ থেকে আগে বেশ কয়েকবার খিচুড়ি কিনেছিলাম। আজকেও আসছিলাম কিন্তু দেখি রেস্তোরাঁটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে।’

এই রোডের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ সুলতান ডাইন। কাচ্চির বদলে ভবনের নিচে ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসেছেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মী। লেকসান লাঘবে পার্সেল দিচ্ছেন তারা।

বিক্রেতারা বলেন, ‘আমরা এখন ইফতারকে কেন্দ্র করে শুধু পার্সেল দিচ্ছি। এখানে ডাইনিং নেই, আমরা এখন অস্তিত্ব সংকটে আছি। এভাবে চললে ব্যবসা করা যাবে না।’

অভিযান আতঙ্কে রেস্তেরাঁয় ক্রেতা নেই। এখন টিভি

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজিতে ভয়াবহ আগুনের পর নড়েচড়ে বসে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। অভিযানে নামে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও র‌্যাব।

বেইলি রোডের দুই পাশে শতাধিক খাবারের দোকান রয়েছে। মাসখানেক আগেও দিনরাত এখানে মানুষের আনাগোনা ছিলো। আবাসিক ভবন কিংবা ভবনের নকশা ও অনুমোদনে ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগে অভিযানের পর বেইলি রোডসহ রাজধানীর দুই শাতাধিক রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে। আর অনেক মালিক অভিযানের ভয়ে বন্ধ করে পালিয়েছেন।

এ সড়কের খোলা থাকা রেস্তোরাঁগুলোও প্রায় জনশূন্য। গত রমজানে ইফতারের আগে জমজমাট খাবারের দোকানের চেয়ার-টেবিলগুলো এবার খালি পড়ে আছে।

একই চিত্র ধানমন্ডির রেস্তোরাঁগুলোয়। রুপায়ন জেড আর প্লাজার বহুতল ভবনের একটি রেস্তোরাঁ হান্ডি। ইন্ডিয়ান, থাই, চাইনিজ খাবারের ঘ্রাণে ইফতারের আগে ও পরে সমাগম হলেও এই রমজানে তাদের বেচাবিক্রি কমেছে। খাবার খেতে আসা মানুষরাও আতঙ্কে থাকেন।

রেস্তোরাঁয়া আসা একজন বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। কিন্তু আমার দুঃখ হয়, যখন কোন ঘটনা ঘটে তখনই আমরা তোড়জোড় করি। আগে থেকে কোন পরিকল্পনা করি না, কেন এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।’

হান্ডি রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ার খায়ের উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আগের রমজানেও ভালো বেচাকেনা করেছি। এখন সেই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

বাণিজ্যিক এ ভবনে রেস্টুরেন্টের অনুমতি না থাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে রাজউক। ১৫ দিনের মধ্যে ভবনের কাগজপত্র হালনাগাদ করতে বলা হয়।

অভিযানে একের পর এক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়ায় এরই মধ্যে বারবার ক্ষোভ জানিয়েছে এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন। সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার শিকার তারা।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘সিস্টেমের কারণে আমরা কমপ্লায়েন্স মেইনটেইন করতে পারছি না। আমাদের সিস্টেম যখন হয়ে যাবে, আর একটা সহনশীল জায়গায়ে এসেই তো খুলতে হবে। বন্ধ করে দিলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা বন্ধ করার পক্ষে না, আমরাও শোধরাতে চাই।’

রেস্তোরাঁ খাতের সংকট নিরসনে বিষেশজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। এদিকে রাজউক বলছে, রেস্তোরাঁর জন্য সব ধরনের নীতিমালা মানতে হবে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অনুমোদিত নকশার হালনাগাদ তথ্য জমা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে সিলগালা রেস্তোরাঁগুলো খুলে দেয়া হবে।’