জামালপুর পৌর এলাকার হাটচন্দ্রা গ্রামের মোর্শেদা বেগম, ১৮-২০ বছর ধরে কাজ করছেন হস্তশিল্প নিয়ে। মেয়ের বিয়ে, দুই ছেলের লেখাপড়া সবই এসেছে তার এই নকশা করা পণ্যের আয় থেকে। শুধু মোর্শেদাই নন, তার মতো হাজারো নারী এখন সংসারের হাল ধরেছেন।
মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘অবসর সময়টুকু কাজে লাগাই। দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা যেটুকুই আসে, সেটা তো বসে থাকলে আসে না। যেটুকুই আসে, সংসারের কাজে লাগে।’
জেলার সাতটি উপজেলায় এক লাখেরও বেশি নারী যুক্ত এই শিল্পে। তাদের হাতে সুই-সুতায় তৈরি হয় নকশী কাঁথা, বেডকভার, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতোয়া, সালোয়ার-কামিজসহ নানা রকম পণ্য। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরের বাজার দখলের পাশাপাশি এই সূচি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
একজন নারী সূচি শিল্পী বলেন, ‘একেক পণ্যের একেক রকম দাম। যেমন কাঁথার দাম নয় হাজার টাকা।’
গত ৫ আগস্টের পরে ব্যবসায় মন্দাভাব নেমে এলেও, ঈদ সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া রমজানের শেষ সপ্তাহে বিক্রি বাড়তে পারে বলে আশা তাদের।
হস্তশিল্পের সাথে জড়িত এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘প্রথম রোজা থেকে পাঁচ-ছয়টা রোজা পর্যন্ত আমাদের বিক্রয় ভালো ছিল না। পরে কয়েকদিন ভালো ছিল, তবে এখন আবারো কমেছে।’
গ্রামের কর্মীদের হাতে নানা ডিজাইনের নকশার ছাপ পরে থান কাপড়ের ওপর। পরে তা বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় শহরসহ ঢাকার পাইকারি ও খুচরা দোকানে। ব্যবসা লাভজনক হওয়াতে অলিগলিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক শোরুম। ক্রেতাদের মতে, পণ্যের মান ও দাম সবই রয়েছে তাদের সাধ্যের মধ্যে।
ক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘নিজেদের হাতের কাজের পণ্য ঘরে থাকলে তা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।’
উদ্যোক্তারা বলছেন, ঈদ, পহেলা বৈশাখ এবং গরমের কথা মাথায় রেখে বেশিরভাগ পোশাকে সুতির উপর নান্দনিক ডিজাইন করা হয়েছে। ভালো বিক্রি হলে শত কোটি টাকার লেনদেনের আশা তাদের।
জামালপুরের আড়ালের ডিজাইনার মো.মাহবুবুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘আমরা মূলত কটন কাপড়ে ছেলেদের এবং মেয়েদের পোশাক ডিজাইন করছি। আশা করছি ডিজাইনগুলো সময়োপযোগী এবং ব্যবহার উপযোগী হবে।’
হস্তশিল্প অ্যাসোসিয়েশন জামালপুরের সভাপতি মো. শাহীনুর আলম বলেন, ‘এই পণ্যগুলো তৈরি করতে পর্যাপ্ত মজুরি দিয়ে এবং দক্ষ কর্মী দিয়ে কাজ করানো হয়। এতে পণ্যের দাম একটু বেড়ে যায় এবং সেই কারণেই এবার বিক্রিও কিছুটা কম।’
বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রচার ও প্রসার ঘটায় হস্তশিল্পকে এরই মধ্যে জামালপুরের ব্যান্ড ঘোষণা করা হয়েছে।