কিশোরগঞ্জে বাসচাপায় ৩ স্কুলছাত্রের প্রাণহানি , বিক্ষোভ ও অবরোধে উত্তাল সড়ক

এখন জনপদে
0

স্কুলে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তিন শিক্ষার্থীর। পৃথক দুই ঘটনায় কটিয়াদী ও হোসেনপুরে ঝরে গেল কোমলমতি তিন প্রাণ। এই দুঃসহ মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালায়।

আজ (মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের ছনকান্দা এলাকায় ঘটে হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাটি। মধ্যপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল দুই চাচাতো ভাই আলী আকবর (১৩) ও জুনায়েদ (১২)। কিন্তু আর ফেরা হলো না তাদের। কিশোরগঞ্জগামী উজানভাটি পরিবহনের একটি বাস তাদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় চালক আলী আকবর। গুরুতর আহত জুনায়েদকে ঢাকা নেওয়ার পথে সেও নিভে যায় চিরতরে।

এই করুণ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে আসে। ক্ষুব্ধ জনতা বানিয়াগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

একই দিনে, মাত্র এক ঘণ্টা পর, হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ গোবিন্দপুর চৌরাস্তা এলাকায় ঘটে আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রাপ্তি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নোহা আক্তার (৮) স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় একটি অটোরিকশার চাপায় গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত নোহা আক্তারের বাবা নজরুল ইসলাম বিলাপ করে বলেন, 'আমার সোনামণিকে আর কখনো স্কুলে যেতে দেখব নাঅ' পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম ও হোসেনপুর থানার ওসি মারুফ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তারা।

একদিনে তিনটি স্কুলপড়ুয়া শিশুর করুণ মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, পুরো কিশোরগঞ্জবাসীকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলন বারবার সামনে এলেও এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ কি আদৌ নেওয়া হচ্ছে? নাকি নিরাপত্তাহীন সড়কে এমন আরো প্রাণ ঝরবে?—এ প্রশ্ন এখন কিশোরগঞ্জের জনমনে।

এএম