চলনবিলে সেচ সুবিধায় খনন করা খালের পাড় দিয়ে বয়ে চলেছে রাস্তা। সে পথ ধরে ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী তিসিখালি মেলায় ছেলেকে নিয়ে এসেছেন হযরত আলী পল্লব। কিনেছেন ছেলের জন্য খেলনা আর খাবার। অন্যদিকে শরীরে যেটুকু শক্তি রয়েছে, তা দিয়ে ছুটে এসেছেন চলনবিলের হিজলী গ্রামের ৭২ বছরের জালাল খাঁ। শৈশব ও যৌবনের নানা স্মৃতি হাতড়ে শোনান হতাশার গল্প।
হেঁটে মেলায় যাচ্ছেন ৭২ বছরের জালাল খাঁ। ছবি: এখন টিভি
পল্লব বলেন, 'এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের গ্রামে একটা উৎসব বেঁধে যেত। বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল এই তিসিখালি মেলা।'
জালাল খাঁ বলেন, 'মেলা উপলক্ষ্যে আগে বৌ-ঝিরা বাবার বাড়িতে আসতো দাওয়াতে। কিন্তু এখন চারদিকে ওয়াজের সভায় আসে সবাই। মেলায় খুব কম আসে।'
চৈত্র সংক্রান্তির আবহ শুরু হয় বৈশাখের আর্বিভাবে। এই সময় সনাতন ধর্মের চড়ক পূজা, মুখা খেলা, হাজরা নাচসহ চলে নানা আনুষ্ঠানিকতা। চলে চৈত্রসংক্রান্তির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ্যমাস পর্যন্ত। আর এসব ঘিরে চলনবিল অঞ্চলে বসে অন্তত অর্ধশত গ্রামীণ নানা মেলা।
নতুন ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে চলে উৎসব আমেজ। মেলাকে কেন্দ্র করে নাইওর হয়ে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেয়েরা। তবে যান্ত্রিকতার ভিড়ে দিন দিন ভাটা পড়ছে সেসব উৎসবে।
চলনবিল অঞ্চলে মেলাকে কেন্দ্র করে জিলাপী, মিষ্টি, ঝুরি, খেলনা, ধান কাটা আর গৃহস্থালির রকমারি যন্ত্রপাতির পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। মেলা থেকে বছরে এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের সিংহভাগ আসে। মেলা ঘিরে পোক্ত হয় স্থানীয় অর্থনীতি।
বিভিন্ন উৎসব,পার্বণ মানুষের মাঝে ভেদাভেদ দূর করার পাশাপাশি সৌহার্দ-সম্প্রতির বন্ধন সৃষ্টি করে। তাই যাপিত জীবনের নানা চক্রে হারিয়ে যাওয়া মেলাগুলোকে টিকিয়ে রাখার তাগিদ নাগরিক সমাজের।