বিশ্বজুড়ে ‘অ্যাভাটার’ ঝড়: ‘ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ সিনেমায় কী চমক রেখেছেন জেমস ক্যামেরন?

নীল সমুদ্র পেরিয়ে এবার আগ্নেয়গিরির দেশে। সলি পরিবারের নতুন সংগ্রামের সাক্ষী হতে চলেছি।
নীল সমুদ্র পেরিয়ে এবার আগ্নেয়গিরির দেশে। সলি পরিবারের নতুন সংগ্রামের সাক্ষী হতে চলেছি। | ছবি: এখন টিভি
0

২০০৯ সালে ‘অ্যাভাটার’ মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাস বদলে গিয়েছিল। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০২২ সালে এসেছিল ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। আর এবার ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পেল এই ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বক্স অফিসে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) থেকে বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্স ও ব্লকবাস্টার সিনেমাসেও সিনেমাটি দর্শকরা উপভোগ করছেন।

একনজরে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’

  • পরিচালক: জেমস ক্যামেরন (James Cameron)।
  • প্রধান কাস্ট: স্যাম ওয়ার্থিংটন, জো সালদানা, সিগর্নি ওয়েভার এবং ওনা চ্যাপলিন।
  • মুক্তির তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫।
  • বক্স অফিস: প্রথম সপ্তাহেই বিশ্বজুড়ে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে নিয়েছে।
  • বাজেট: ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
  • নতুন গোত্র: অ্যাশ ক্ল্যান (নেতৃত্বে ওনা চ্যাপলিন)।
  • শুটিং লোকেশন: নিউজিল্যান্ড।
  • মূল থিম: পরিবারের আত্মপরিচয়, অভিবাসী জীবন ও সংকর প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ।

প্যান্ডোরার নতুন রূপ দেখতে তৈরি তো? এবার যুদ্ধ হবে আগুন আর ছাইয়ের বিরুদ্ধে! |ছবি : সংগৃহীত

গল্পের নতুন মোড়: আগ্নেয়গিরির দেশে না’ভিরা

আগের দুটি সিনেমায় আমরা প্যান্ডোরার জঙ্গল এবং সমুদ্রের নীল জগৎ দেখেছি। তবে এবার জেমস ক্যামেরন দর্শকদের নিয়ে গেছেন এক রুক্ষ ও ভয়াবহ পরিবেশে। এবারের মূল আকর্ষণ হলো ‘অ্যাশ পিপল’ (Ash People) বা ছাইয়ের জাতি। যারা আগ্নেয়গিরির আশেপাশে বসবাস করে।

  • মাংকোয়ান গোষ্ঠী: এই নতুন না’ভি গোষ্ঠীর নেত্রী ভার্যাং (Varang) চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওনা চ্যাপলিন। তারা আগের দেখা না’ভিদের মতো শান্ত বা প্রকৃতিপ্রেমী নয়, বরং অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ও প্রতিহিংসাপরায়ণ।
  • চরিত্রের বিবর্তন: জ্যাক সুলি ও নেইতিরির পরিবার এবার কেবল মানুষের (RDA) সঙ্গেই লড়ছে না, বরং নিজেদের স্বজাতির এক ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। জেমস ক্যামেরন এবার না’ভিদের অন্ধকার দিকটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

কেন আলোচিত এই অ্যাভাটার সিনেমা? (Why is it so popular?)

১. প্রযুক্তির কারিশমা: জেমস ক্যামেরন বরাবরই প্রযুক্তির ব্যবহারে সেরা। এবারের সিনেমায় আগ্নেয়গিরি, লাভা এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গ যেভাবে সিজিআই (CGI) ও থ্রিডিতে দেখানো হয়েছে, তা দর্শকদের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।

২. আবেগের জয়গান: কেবল অ্যাকশন নয়, পরিবারের বন্ধন, শোক এবং প্রতিশোধের এক অসাধারণ মিশ্রণ রয়েছে এই সিনেমায়। নেইতিরির চরিত্রের ক্ষোভ এবং জ্যাক সুলির রক্ষক হয়ে ওঠার লড়াই দর্শকদের মনে দাগ কাটছে।

৩. ৩ ঘণ্টা ১৭ মিনিটের অভিজ্ঞতা: দীর্ঘ রানটাইম হওয়া সত্ত্বেও প্যান্ডোরার নতুন জাদুকরী দৃশ্যায়ন দর্শকদের হলে বসিয়ে রাখছে।

জেমস ক্যামেরনের জাদুকরী দুনিয়ায় আবার ফেরা। প্যান্ডোরা এবার আরও বেশি রহস্যময় আর ভয়ংকর! |ছবি: এখন টিভি

বক্স অফিসে ‘অ্যাভাটার’ ঝড়: প্রথম সপ্তাহেই বিশ্বজুড়ে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার আয়

জেমস ক্যামেরনের জাদুকরী সৃষ্টি 'অ্যাভাটার' ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি 'অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ' মুক্তির প্রথম সাপ্তাহিক ছুটিতেই উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসের শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর এই ব্লকবাস্টার সিনেমাটি বড়দিনের আগেই দর্শকদের হলে টানতে সক্ষম হয়েছে।

আরও পড়ুন:

আয়ের রেকর্ড (Box Office Record)

মুক্তির প্রথম কয়েক দিনেই উত্তর আমেরিকায় টিকিট বিক্রি থেকে সিনেমাটি আয় করেছে ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বিশ্বজুড়ে এর জনপ্রিয়তা আরও আকাশচুম্বী; আন্তর্জাতিক বাজারসহ প্রথম সাপ্তাহিক ছুটিতে সিনেমাটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার। ফ্র্যাঞ্চাইজ এন্টারটেইনমেন্ট রিসার্চের মতে, বিদেশের মাটিতেও সিনেমাটি অভাবনীয় ব্যবসা করবে।

শোককে শক্তিতে পরিণত করে সলি পরিবার ফিরছে। পরিবারের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। |ছবি : সংগৃহীত

বক্স অফিসের শীর্ষ ৫ সিনেমা (Top 5 Movies at Box Office)

  • অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ: ৮৮ মিলিয়ন ডলার (শীর্ষস্থান)।
  • ডেভিড (David): ২০ মিলিয়ন ডলার আয় করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে অ্যাঞ্জেল স্টুডিওসের এই অ্যানিমেশন সিনেমা।
  • দ্য হাউসমেইড (The Housemaid): জনপ্রিয় উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমাটি ১৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় স্থানে।
  • দ্য স্পঞ্জবব মুভি: ১৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র স্পঞ্জববের নতুন এই সংস্করণ।
  • জুটোপিয়া ২ (Zootopia 2): ১৪.৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ডিজনির এই সিনেমাটি, যা অস্কারের দৌড়েও এগিয়ে আছে।

এছাড়াও শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে 'ফাইভ নাইটস অ্যাট ফ্রেডিস ২', 'উইকেড: ফর গুড' এবং 'হ্যামনেট'-এর মতো আলোচিত সিনেমাগুলো।

সংকর জীবনের চ্যালেঞ্জ আর আত্মপরিচয়ের লড়াই—এবার প্যান্ডোরা বলবে এক বাস্তুচ্যুত অভিবাসী পরিবারের গল্প। |ছবি: এখন টিভি

অ্যাভাটার দেখতে গিয়ে টাকা ফেরত চাইলেন ভক্তরা! নেপথ্যে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’ বিতর্ক

জেমস ক্যামেরনের সাই-ফাই মহাকাব্য ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ (Avatar: Fire and Ash) বিশ্বজুড়ে বক্স অফিস কাঁপালেও দর্শকদের একটি বড় অংশ প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়েছেন চরম ক্ষোভ নিয়ে। টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে এলেও তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল মার্ভেল স্টুডিওর বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’ (Avengers: Doomsday)-এর প্রথম টিজার ট্রেলার দেখা। কিন্তু হলে ট্রেলার না থাকায় অনেক ভক্তই এখন টিকিটের টাকা ফেরতের দাবি তুলছেন।

কেন ক্ষুব্ধ মার্ভেল ভক্তরা? (Why Fans are Angry)

ডিজনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, নির্দিষ্ট কিছু প্রেক্ষাগৃহে ‘অ্যাভাটার ৩’-এর প্রদর্শনীর আগে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’-এর টিজার দেখানো হবে। এই ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মার্ভেল অনুরাগী শুধুমাত্র এক মিনিটের সেই টিজার দেখার জন্য চড়া দামে অ্যাভাটারের টিকিট কাটেন। তবে ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক হলে সেই ট্রেলারটি দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকরা একে ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন:

অনলাইনে ফাঁস টিজার ট্রেলার (Leaked Teaser Online)

সব প্রেক্ষাগৃহে এক পরিস্থিতি ছিল না; বেশ কিছু জায়গায় ট্রেলারটি দেখানো হয়েছে এবং সেটি ইতিমধ্যেই অনলাইনে ফাঁস (Leaked) হয়ে ভাইরাল হয়েছে। এতে ডক্টর ডুম হিসেবে রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের প্রত্যাবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে।

‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’ ও ‘সিক্রেট ওয়ার্স’-এর নতুন আপডেট

মার্ভেল স্টুডিও তাদের পরবর্তী সিনেমাগুলোর মুক্তির সূচিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী:

  • অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে (Avengers: Doomsday): ১৮ ডিসেম্বর ২০২৬ (যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে একই দিনে)।
  • অ্যাভেঞ্জার্স: সিক্রেট ওয়ার্স (Avengers: Secret Wars): ১৭ ডিসেম্বর ২০২৭।

দুটি সিনেমাই পরিচালনা করছেন জনপ্রিয় রুসো ব্রাদার্স (Russo Brothers), যারা এর আগে ‘এন্ডগেম’ ও ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ পরিচালনা করে ইতিহাস গড়েছিলেন।

নেটেয়ামের শূন্যতা আর নতুন শত্রুর আতঙ্ক; সলি পরিবার কি পারবে নিজেদের রক্ষা করতে? |ছবি : সংগৃহীত

চলচ্চিত্রের ইতিহাস বদলে দেওয়া ‘অ্যাভাটার’: ২০০৯ সালের সেই জাদুকরী শুরু

চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে কিছু সিনেমা আছে যা কেবল বিনোদন নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনা করে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে জেমস ক্যামেরন যখন ‘অ্যাভাটার’ নিয়ে হাজির হন, তখন বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক রচিত হয়। এটি কেবল একটি সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ছিল না, বরং প্রযুক্তি এবং মানবিক দর্শনের এক অপূর্ব মিশেল। ২৩৭ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেটে নির্মিত এই সিনেমাটি মুক্তির পর বিশ্বজুড়ে আয় করে তাক লাগিয়ে দেয় ২.৯২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি!

প্যান্ডোরার জাদুকরী দৃশ্যায়ন ও প্রযুক্তি

অ্যাভাটার সিনেমাটি ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের (Visual Effects) এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। প্যান্ডোরা গ্রহের ভাসমান পাহাড়, উজ্জ্বল বনভূমি আর রহস্যময় নক্ষত্রমণ্ডল দর্শকদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে গিয়েছিল। ক্যামেরন থ্রিডি প্রযুক্তিকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যে প্রতিটি দৃশ্য যেন জীবন্ত চিত্রকর্ম হয়ে ধরা দেয়।

গল্পের গভীরতা: মানবতা বনাম লোভ

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র জেক সলি (স্যাম ওয়ারথিংটন) একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেরিন সেনা। ‘অ্যাভাটার প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে তিনি নাভিদের দেহে প্রবেশ করেন। তার প্রাথমিক মিশন ছিল খনিজ সম্পদ ‘আনঅবটেনিয়াম’ (Unobtanium) সংগ্রহের জন্য নাভিদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করা। কিন্তু নাভিদের সংস্কৃতি, প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় বন্ধন এবং তাদের সরল জীবন দর্শন জেকের ভেতরের চেতনাকে বদলে দেয়। এই সিনেমাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষা করা ব্যক্তিগত লাভের চেয়েও অনেক বড়।

আরও পড়ুন:

কেন আজও অতুলনীয় ‘অ্যাভাটার’?

  • প্রযুক্তির মাইলফলক: মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তি ও নতুন ধারার ক্যামেরার ব্যবহার।
  • সাফল্য: এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড ধরে রেখেছে।
  • মানবিক বার্তা: এটি পরিবেশ রক্ষা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বক্তব্য।

নির্মাণের নেপথ্যের অবিশ্বাস্য তথ্য (Interesting Facts)

  • ভাষাতত্ত্বের কারিশমা: নাভিদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাষা তৈরি করেছিলেন ভাষাতত্ত্ববিদ ড. পল আর. ফ্রমার। প্রায় এক হাজার শব্দের এই ভাষার ব্যাকরণ ও ব্যাকরণিক ক্রম একেবারেই স্বতন্ত্র।
  • স্যাম ওয়ার্থিংটনের সংগ্রাম: জেক সলি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার আগে অভিনেতা স্যাম ওয়ার্থিংটন এতটাই অভাবী ছিলেন যে তিনি নিজের গাড়িতেই রাত কাটাতেন।
  • দীর্ঘ এক দশকের অপেক্ষা: ১৯৯৯ সালে মুক্তির কথা থাকলেও বাজেটের সংকটে প্রজেক্টটি আটকে যায় এবং প্রায় আট বছর পর এর শুটিং শুরু হয়।
  • পানির নিচে রেকর্ড: দ্বিতীয় কিস্তি ‘ওয়ে অব ওয়াটার’-এর জন্য অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট পানির নিচে টানা ৭ মিনিট ১৪ সেকেন্ড নিশ্বাস বন্ধ রেখে শুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।
  • সংগীতের আবহ: জেমস হর্নারের সাউন্ডট্র্যাক প্যান্ডোরার নাভি সম্প্রদায়ের স্পন্দন ও জীবনধারাকে দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছে।

প্যান্ডোরার অন্ধকার দিকটি নিয়ে আসছে ‘অ্যাশ ক্ল্যান’। ভার্যাং-এর হিংস্রতা কি সামলাতে পারবে নাভিরা? |ছবি: এখন টিভি

১৩ বছরের অপেক্ষা ও পানির নিচের মহাকাব্য: ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’

২০০৯ সালের সাফল্যের পর ২০১৪ সালেই আসার কথা ছিল ‘অ্যাভাটার’-এর সিকুয়েল। কিন্তু সেই অপেক্ষা দীর্ঘ হতে হতে ২০২২ সালে এসে শেষ হয়। পরিচালক জেমস ক্যামেরন এবার দর্শকদের নিয়ে যান প্যান্ডোরার নীল জলরাশির গভীরে। ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই বিশাল আয়োজনের সিনেমাটি বক্স অফিসে দাপট দেখিয়ে আয় করে ২.৩৪৩ বিলিয়ন ডলার।

কেন বিলম্বিত হলো এই নির্মাণ? (Why was it delayed?)

সিনেমার মুক্তি বারবার পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে ছিল তিনটি বড় কারণ: ১. গভীর সমুদ্রের লোকেশন: সমুদ্রের একদম যথাযথ লোকেশন এবং জলজ জগতের সঠিক আবহ ফুটিয়ে তুলতে ক্যামেরনের কয়েক বছর সময় লেগেছে। ২. প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন: পানির নিচে মোশন ক্যাপচার শুট করার জন্য কোনো প্রযুক্তি তখন ছিল না। এই সিনেমার জন্যই নতুন সব ক্যামেরা ও সেন্সর আবিষ্কৃত হয়েছে। ৩. চিত্রনাট্য ও কোভিড: চিত্রনাট্য বারবার পরিবর্তন করা এবং সবশেষে কোভিডের কারণে দীর্ঘ লকডাউন এই বিলম্বকে চূড়ান্ত রূপ দেয়।

গল্প ও নতুন চরিত্র (The Story and New Cast)

এবারের গল্প আবর্তিত হয়েছে জেক সলি (স্যাম ওয়ারথিংটন) এবং নেইতিরির (জোয়ি সালদানা) পরিবারকে ঘিরে। তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা এবং মানুষের (RDA) আগ্রাসনের হাত থেকে নাভিদের জলজ গোত্রকে বাঁচাতে এক মহাকাব্যিক লড়াই ফুটে উঠেছে এখানে। নতুন চরিত্র হিসেবে যুক্ত হয়েছেন কেট উইন্সলেট (রোনাল চরিত্রে) এবং ক্লিফ কার্টিস (তনোয়ারি চরিত্রে), যারা মিতকানিয়া গোত্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

নীল নাভিদের বিপরীতে এবার আগুনের ছাই মাখা ভয়ংকর এক গোষ্ঠী। প্যান্ডোরায় শুরু হচ্ছে মহাযুদ্ধ! |ছবি : সংগৃহীত

শুরু হলো ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ ঝড়: প্যান্ডোরার নতুন বিপদ ‘অ্যাশ ক্ল্যান’

বিশ্বজুড়ে দর্শকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মুক্তি পেয়েছে জেমস ক্যামেরনের ‘অ্যাভাটার’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’। ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেটে নির্মিত এই সিনেমাটি কেবল প্রযুক্তির চমক নয়, বরং এক গভীর মানবিক ও বাস্তুচ্যুত জীবনের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছে।

গল্পের সারসংক্ষেপ: শোক ও নতুন শত্রুর মুখোমুখি সলি পরিবার

আগের কিস্তিতে বড় সন্তান নেটেয়ামের মৃত্যু সলি পরিবারকে গভীরভাবে শোকাতুর করেছে। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই এবার তাদের সামনে হাজির হয়েছে নতুন আতঙ্ক—‘অ্যাশ ক্ল্যান’ (Ash People)।

  • নতুন প্রতিপক্ষ: আগ্নেয়গিরির বাসিন্দা এই আক্রমণাত্মক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছে ভার্যাং (ওনা চ্যাপলিন)। তারা জেক সলি (স্যাম ওয়ার্থিংটন) ও নেইতিরির (জোয়ি সালদানা) পরিবারের জন্য এক ভয়ংকর হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
  • সংকর জীবনের সংকট: জেমস ক্যামেরন জানান, এবার সলি পরিবারের সন্তানরা তাদের আত্মপরিচয় নিয়ে সংকটে পড়বে। মা নাভি কিন্তু বাবা অন্য গ্রহের—এই সংকর (Hybrid) জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোই এখানে ফুটে উঠবে। বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের জীবন সংগ্রামের ছোঁয়া পাওয়া যাবে এই গল্পে।

নির্মাণের চমক: ৭ বছরের সাধনা ও নতুন বাদ্যযন্ত্র

প্রযুক্তির পাশাপাশি এই সিনেমার সংগীতেও রয়েছে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম:

  • বিশাল স্কোর: সুরকার সাইমন ফ্র্যাংলেন (Simon Franglen) দীর্ঘ সাত বছর সময় নিয়ে সিনেমার ১ হাজার ৯০৭ পাতার অর্কেস্ট্রা স্কোর লিখেছেন।
  • নতুন বাদ্যযন্ত্র: প্যান্ডোরার নাভিরা কেমন যন্ত্র বাজাতে পারে, তা কল্পনা করে তিনি সম্পূর্ণ নতুন কিছু বাদ্যযন্ত্রও আবিষ্কার করেছেন।
  • নিউজিল্যান্ডের লোকেশন: সিনেমার বড় একটি অংশের শুটিং হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মনোরম ও বৈচিত্র্যময় লোকেশনে।

মার্ভেল এবং ডিজনির মতো বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এই বিভ্রাট নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আসেনি। তবে ট্রেলার বিভ্রাটে একদল দর্শক ক্ষুব্ধ হলেও, বিশ্বজুড়ে বক্স অফিসে 'অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ'-এর জয়রথ থামছে না। অন্যদিকে, রুসো ব্রাদার্সের পরিচালনায় 'অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে' এবং 'সিক্রেট ওয়ার্স' নিয়ে ভক্তদের মনে প্রত্যাশার পারদ এখন আকাশচুম্বী। ২০২৬ ও ২০২৭ সাল যে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মার্ভেল ও জেমস ক্যামেরনের রাজত্বে কাটবে, তা এখন থেকেই স্পষ্ট।

এসআর