দেশে এখন
সংস্কৃতি ও বিনোদন
0

আবু ইসহাক, বাংলা সাহিত্যের এক গৌরবোজ্জ্বল নাম

বাংলা সাহিত্যের এক গৌরবোজ্জ্বল নাম আবু ইসহাক। সাহিত্য সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং শক্তিমত্তা প্রশ্নাতীত। তার রচিত গল্প-উপন্যাসে উঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন অসংগতি। কিন্তু কালজয়ী কথা সাহিত্যিক নিজ জেলাতেই অনেকটা অবহেলিত। জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারিভাবে নেয়া হয় না বিশেষ কোনো কর্মসূচি। প্রচার না থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছেও অজানা বিখ্যাত এ সাহিত্যিকের নাম।

কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের 'সূর্য দীঘল বাড়ি' অবলম্বনে নির্মিত হয় দেশের প্রথম সরকারি অনুদানের সিনেমা। আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাটি ৩টি ভাষায় অনুদিত হয়। বিখ্যাত গল্পে লেখক তুলে এনেছেন সমাজপতিদের ধর্মান্ধতা ও প্রতিহিংসা। মাত্র ২১ বছর বয়সে কালজয়ী উপন্যাসটি রচনা করেন আবু ইসহাক।

চরের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত নিয়ে লেখা 'পদ্মার পলিদ্বীপ'। পুলিশে চাকরিকালীন লেখা রহস্য উপন্যাস 'জাল'। এরপর মহাপতঙ্গ, হারেম ও জোঁক এর মতো বিখ্যাত লেখনী বাংলা সাহিত্যের স্থায়ী আসনে বসায় সরকারি চাকুরে আবু ইসহাককে।

যার লেখনীর মাধ্যমে উঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তাকেই মনে রাখেনি সাহিত্য অনুরাগীরা। এমনকি ঘটা করে পালিত হয় না তাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস। জন্মভিটা শরীয়তপুরের নড়িয়ার শিরঙ্গল গ্রামে আবু ইসহাকের টিনের বসত ঘরটি ছাড়া নেই কোনো স্মৃতি চিহ্ন। বর্তমানে ঘরটিকে সযত্নে আগলে রেখেছেন আবু ইসহাকের ভাতিজা মাসুদ।

আবু ইসহাকের ভাতিজা মো. মাসুদ বলেন, ‘বছরে একবার বেড়াতে আসতো বর্ষাকালে। ৯ টি জাতীয় ও ৬ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।’

বিঝাড়ি উপসী তারাপ্রসন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন আবু ইসহাক। কিন্তু সেই বিদ্যালয়েও তাকে নিয়ে নেই কোনো আয়োজন। জেলার সরকারি গণগ্রন্থাগারেও খুঁজে পাওয়া যায়নি এই বিখ্যাত লেখকের কোনো বই। এতে ক্ষুব্ধ পাঠকরাও।

পাঠক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি নিজ উদ্যোগে আবু ইসহাকের সূর্য দীঘল বাড়ি বইটি পড়েছি তবে এই লাইব্রেরিতে না।’

লাইব্রেরিয়ান বলেন, ‘৪০ হাজার বইয়ের মধ্যে বলা কঠিন। আমরা এখন শরিয়তপুর কর্নার নিয়ে আসবো সেখানে শুধু শরিয়তপুরের লেখকের বই থাকবে।’

তবে, সম্প্রতি লেখকের জন্মমাস উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো শরীয়তপুর সাহিত্য পরিষদ আয়োজন করে আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আসর। জেলার কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের সাথে হাজির হয় নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাও।

দাবি ওঠে লেখকের নামে গ্রন্থাগার ও বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে জন্ম-মৃত্যুদিন পালনের।

শরীয়তপুরের এলাকাবাসীর একজন বলেন, ‘তিনি যে ঘরে থাকতেন সেখানে গেলেও বোঝার উপায় নেই। এইটা কি লেখকের বাড়ি।’

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আবু ইসহাকের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটা করে লাইব্রেরি থাকা উচিত।’

শিক্ষানুরাগীরা মনে করেন সমাজ সংস্কার, পুনর্গঠন ও পরিবর্তনে গল্প-উপন্যাস পাঠ্যসূচীতে অর্ন্তভুক্ত করা গেলে নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটবে।

বাংলা অ্যাকাডেমির সদস্য সৈয়দ নাজমুল আহসান বলেন, ‘আবু ইসহাকের লেখাগুলো আরো বেশি প্রচার করতে অতিদ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।’

সংখ্যার বিচারে স্বল্প হলেও বাংলার কথা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আবু ইসহাক। গল্প ও উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবেন নিভৃতে জীবন কাটানো এ কথা সাহিত্যিক।

ইএ