সারা বছর দেশের প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত সিনেমা মুক্তি না পেলেও ঈদ এলেই যেন সিনেমা মুক্তি দেয়ার হিড়িক পরে। তড়িঘড়ি করে নির্মাণ শেষ করে ঈদে আসতে চান নির্মাতারা। এই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ঈদের সিনেমার সংখ্যা বাড়ছেই। এবার মুক্তির পাওয়ার কথা ছিল মোট ১৩টি সিনেমা তবে শেষ পর্যন্ত ঈদে মুক্তি পাচ্ছে ১১টি সিনেমা। গত বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছিল ৮টি সিনেমা। ঈদে এত সিনেমা মুক্তির নজির নেই বহুবছর।
ঈদের সিনেমার আলোচনায় এগিয়ে রয়েছে শাকিব খান ও শরিফুল রাজ। গত বছর হিমেল আশরাফের পরিচালনায় প্রিয়তমা দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন শাকিব খান। এবার একই পরিচালকের রাজকুমার সিনেমায় দেখা যাবে তাঁকে। ঢাকা, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, বান্দরবান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে শুটিং হয়েছে এই সিনেমার। গল্পের কারণেই এসব লোকেশন বেছে নেওয়া। ফলে সিনেমাটি বাজেটও বেড়েছে হু হু করে। তবে ব্যবসায়ীক স্বার্থে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিনেমাটির নির্মাণ ব্যয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দেয়নি টিম রাজকুমার। তবে শুরু থেকেই কানাঘুষোর মাধ্যমে শোনা যায়, ৮কোটিরও অধিক ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে রাজকুমার।
অন্যদিকে প্রায় দেড় বছর পর নতুন সিনেমা নিয়ে আসছেন শরিফুল রাজ। ঈদে একটি নয়, তিন তিনটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে তাঁর। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের কাজলরেখা, মোস্তফা কামাল রাজের ওমর ও মিশুক মনি পরিচালিত দেয়ালের দেশ। গান, টিজার ও ট্রেলার প্রকাশের পর প্রশংসিত হচ্ছে সিনেমা তিনটি। প্রযোজনা সংস্থার সুত্রে জানা গেছে সরকারি অনুদানসহ সব মিলিয়ে কাজলরেখা পাঁচ কোটি টাকার সিনেমা। অতীতের চিত্রগুলো বাস্তব সম্মতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হাত খুলে প্রযোজককে খরচ করতে হয়েছে। চারশ বছর আগের বাড়ি, সেট, বাণিজ্যিক বন্দর সব মিলিয়ে খরচ প্রায় দুই কোটি টাকা। শুকপাখি চরিত্র এনিমেশন। এখানেও বড় বাজেট ব্যয় করা হয়েছে।
এছাড়া এবারের ঈদে ২য় সর্বোচ্চ ২৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া শরীফুল রাজের ওমর সিনেমার বাজেট প্রায় দুই কোটি টাকা। আর দেয়ালের দেশ ছবিটি সরকারি অনুদান পেলেও কো-প্রযোজক হিসেবে মিশুক মনি নিজের টাকাও ঢেলেছেন এতে। তা ঠিক কত ঢেলেছেন সে সম্পর্কে পরিচালক খোলাসা করতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনেমাটির টিমের এক সদস্য জানিয়েছেন প্রায় দুই কোটির মত নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ছবিটির বেলায়।
ঈদে মুক্তি পেয়েছে চিত্রনায়ক আদর আজাদ ও চিত্রনায়িকা পূজা চেরি অভিনীত সিনেমা লিপস্টিক। সিনেমাটির আইটেম গান বেসামাল প্রকাশের মাধ্যমে মুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্রের খবর ছবিটির নির্মাণ ব্যয় ছিল দেড় কোটিরও বেশি। তবে প্রযোজক ও পরিচালক সঠিক বাজেটের বিষয়ে খোলাসা করে জানাননি কিছুই। শুধু জানিয়েছেন কোটি টাকারও বেশি বাজেটের ছবি লিপস্টিক। তবে অন্যান্য সিনেমার যেখানে সিনেমার বাজেট ঘটা করে জানান দেয়া হয় দর্শকদের মাঝে আগ্রহ তৈরির জন্য সেখানে বাংলা সিনেমার বাজেট বা সিনেমার আয় সম্পর্কে দর্শকদের খোলাসা না করার পেছনের কারণ কি এর উত্তরও যেন কতৃপক্ষের কাছে খোলাসা নয়।
ব্লকবাস্টার সিনেমাসের হেড অব অপারেশন রাশিন শলীফ বলেন, 'মুভিগুলো বছর জুরে থাকলে আমাদের সেলটা সারা বছরই থাকতো। চাপ অবশ্যই থাকে বিপুল পরিমাণে যেহেতু বাংলা সিনেমা রিলিজ হচ্ছে।'
এছাড়াও শুধুমাত্র ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলা সিনেমা মুক্তি না দিয়ে সারাবছরজুড়ে এই চেষ্টা করা হলে চাপ কিছুটা কমবে বলেও মনে করা হয়।
২০০৯ সালের পর আবারো এবছর ঈদে মুক্তি পেয়েছে ১১টি সিনেমা। এত এত সিনেমা মুক্তির ভিড়ে কোন সিনেমা শেষ পর্যন্ত দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে আর কোন সিনেমা তার বাজেট ছাড়িয়ে আয় করবে তা বুঝতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন।