রাজধানীতে বাড়ছে সহিংসতা-খুন; ‘বিচারহীনতাই’ কি নেপথ্যে?

রাজধানীতে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত
রাজধানীতে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত | ছবি: এখন টিভি
0

রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে খুনের ঘটনা। একের পর এক নৃশংস ঘটনায় বেড়েছে আতঙ্ক। রাত বাড়লেই যেন অপরাধীরা মেতে ওঠেন অপরাধের মহোৎসবে—এমন অবস্থায় প্রয়োজনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই বের হতে হয় বলে জানালেন নগরবাসী। বাইরে জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বললেও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতা বাড়ার মূল কারণ বিচারহীনতা।

৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ঢাকা শহর নানা অসংগতিতে তিলোত্তমা তকমাটি হারিয়েছে বহু আগেই। বিশ্লেষণ বলছে, জনঘনত্বের এ শহর ক্রমশ আতঙ্কের হয়ে উঠছে। বিস্তৃত হচ্ছে পুরোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড বাহিনী। খুন শব্দটি ভেসে বেড়াচ্ছে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শত্রুতা থেকে পূর্বকল্পিত আধিপত্য বিস্তারে একে অপরের জীবন কেড়ে নিচ্ছে নির্মমভাবে।

যে খুনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনীতি, প্রেম, আর্থিক দেনা-পাওনা, কলহ, চাঁদাবাজি, বিরোধীমত দমন ও দখলসহ নানা ইস্যু। আর এতে বাবা-মা হারাচ্ছেন তার সন্তানকে, কখনো সন্তান হচ্ছে পিতৃহারা।

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সলের জানুয়ারিতে দেশে খুন হয় ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০, এপ্রিলে গিয়ে তা বেড়ে দাড়ায় ৩৩৮ জনে। এছাড়া মে’তে খুন হন ৩৪১ জন, জুনে গিয়ে এ সূচক আরও বেড়ে গিয়ে ঠেকে ৩৪৪ জনে।

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এ ১০ মাসের পরিসংখ্যান বলছে, গেল এক দশকের মধ্যে দেশে দৈনিক গড়ে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে চলতি বছর। তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ ৯ বছরে গড় খুন ছিল ৮ থেকে ১০ এর ঘরে। কিন্তু ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুনের সংখ্যা এসে ঠেকে ২৯১১টি। সে হিসাবে দেশে গড় দৈনিক খুনের সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১১তে।

সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ছিল ডিএমপির কমিশনারের কাছে। তিনি জানান, জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ তার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন:

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।’

নগরবাসীরা বলছেন, মানুষ দিন দিন প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে অবনতি হচ্ছে পারিবারিক সম্পর্কের। এতে বাড়ছে অপরাধের মাত্রা।

নগরবাসীদের মধ্যে কয়েকজন জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে, রাত ১০টার পরই বাইরে চলাচলে বেশ ঝুঁকি থাকে। ছাড় পান না রিকশাওয়ালারাও, তাদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সা নিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ তাদের।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতা বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘আগে যে ভিক্টিম ছিল, এখন সে শক্তিশালী, আর আগে যে অফেন্ডার বা অপরাধী ছিল, সে এখন দুর্বল। সেক্ষেত্রে আগে যে দুর্বল ছিল এখন শক্তিশালী হয়েছে, সে তো প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবেই।’

তিনি বলেন, ‘কাউকে হত্যা করলে বা কারও কোনোকিছু দখল করলে সেটা মামলা হতেও পারে, নাও পারে। মামলা হলে গ্রেপ্তার হতেও পারে, নাও পারে। এখনই অপরাধ করার “সময়”-এ সময়টাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে।’

নিহতদের স্বজনদের দাবি, যে বুড়িগঙ্গার সমতল অঞ্চলে অবস্থিত শহর ঢাকা শহর থেকে খুন শব্দটি মুছে যাক, মানুষের মধ্যে ফিরে আসুক স্থিরতা আর সহমর্মিতা।

এসএইচ