ট্রাইব্যুনালের ভেতর থেকেই ফাঁস হচ্ছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তথ্য!

দেশে এখন
অপরাধ ও আদালত
0

আগে থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর পেয়ে যাচ্ছেন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযুক্তরা। এতে ট্রাইব্যুনালের ভেতরে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এদিকে, আশুলিয়ায় হত্যার পর ৬ জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন জানান, ৫ আগস্ট চাঁনখারপুলের গণহত্যার তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে, ঈদের পরে আদালতে জমা হবে। এই মামলায় আসামি আটজন।

১৯ আগস্ট ২০২৪। রামপুরায় মেরাদিয়া বাজারের কাছে নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ছাত্রকে গুলি করতে দেখা যায় কিছু পুলিশ সদস্যদের। দেশব্যাপী আলোচিত সেই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন রামপুরা জোনের এডিসি রাশেদুল ইসলাম। ৫ আগস্টের পরে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনায় মামলা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ৯ মার্চ ২০২৫।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কিছুক্ষণ পরই এডিসি রাশেদুল ইসলাম বরিশাল নগরের শীতলাখোলা ট্রাফিক অফিস থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যান। মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন তিনি। পরে আর খোঁজ নেই তারা।

কিভাবে জানলেন রাশেদুল? শুধু এডিসি রাশেদ নন, ওসি মশিউর ও এস আই তরিকুল সবার পালিয়ে যাওয়ার গল্পটাই একই রকম। কে বা কাদের তথ্যে পালিয়েছেন তারা? তখন চিফ প্রসিকিউটর অফিস সাংবাদিকদেরই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এখানে আসামি হয়ে এসেছেন তারা প্রভাবশালী, তাদের কাছে অর্থবিত্ত আছে। তারা নানাভাবে এ বিচারকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করবেন, বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন, আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন।’

আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সাথে যুক্ত থাকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, চিফ প্রসিকিউটর অফিস, ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস, আদালতের এজলাস, আইজিপি অফিস, এবং সংশ্লিষ্ট থানা।

তা হলে কে ৫ আগস্টের ছাত্র জনতা হত্যার অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর পৌঁছে দিচ্ছে। আদালত সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ৫১ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পালিয়েছে ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে ৯৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য যে ফরমাল রিকোয়েস্ট বা চিঠিটা আসে তখন পর্যন্ত কেউ জানে না। আমরা পিটিশন তৈরি করছি সেটা জানে না। কোর্টে যখন যাচ্ছি সেটা জানে না। যখনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হচ্ছে তখনই এমন কিছু হচ্ছে। এটা আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পেছনে যে রহস্য আছে সেটা যেন উদঘাটন হয়।’

চিফ প্রসিকিউটর দপ্তরের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হওয়ার কারণে আগে থেকেই খবর পেয়ে যান তারা। তবে এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ না পাওয়ার কথা জানান পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘এটা খুবই গুরুতর বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে তাহলে আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখবো।’

সকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আশুলিয়ায় হত্যার পর ৬ জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। সকালে এই মামলার আসামি এসআই মালেক এবং কনস্টেবল মুকুলকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

জুলাই-আগস্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ মামলায় শতাধিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। যেখানে বেশিরভাগই ধরা ছোয়ার বাইরে। এখনো কেন তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্ন ঘুরছে নানা মহলে। এ নিয়ে বেশ কিছু শুনানিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এএইচ