স্থানীয় চা বিক্রেতা মাসুদ মিয়া বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করে দোকানের হাঁস মুরগির ঘরে আশ্রয় দেন। খবর পেয়ে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং ও নেত্রকোণা পেট রেস্কিউ টিমের স্বেচ্ছাসেবকরা বন বিভাগের কাছে বাচ্চা দুটি হস্তান্তর করে।
স্থানীয়রা জানান, সাতপাই চকপাড়া এলাকার তুরাব মিয়া ধান ক্ষেত সকাল থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেন শ্রমিকরা। দুপুরের পর ধান ক্ষেত থেকে পরপর দুইটি মেছো বিড়ালের ছানা বেরিয়ে আসলে স্থানীয়রা আটক করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে পাশের চায়ের দোকানদার মাসুদ মিয়া উদ্ধার করে লোহার খাঁচায় আশ্রয় দেয়।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে স্বেচ্ছাসেবকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাচ্চা গুলো মেছো বিড়ালের ছানা বলে শনাক্ত করে বন বিভাগে খবর দেন। স্থানীয়রা আরও জানান, ধান ক্ষেতে একটি বড় মেছো বিড়াল সহ মোট তিনটি ছানা ছিলো। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বড় মেছো বিড়াল ও একটি ছানা পালিয়ে চলে যায়। আর শ্রমিকদের হাতে ধরা পড়ে দুইটি ছানা।
স্থানীয় চা বিক্রেতা মাসুদ মিয়া বলেন, ‘ধানক্ষেতে বাচ্চা দুটি ধরা পড়ার পর আমি এদের মারতে নিষেধ করি। পরে উদ্ধার করে আমার হাঁস মুরগির খাঁচায় এদের আশ্রয় দিই। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক জানান এটি মেছো বিড়ালের ছানা। পরে স্বেচ্ছাসেবক ও বন বিভাগের লোকজন আসলে তাদের কাছে বাচ্চাগুলোকে হস্তান্তর করি।’
নেত্রকোণা পেট রেস্কিউ টিমের মাহবুব আলম আবিদ বলেন, ‘স্থানীয় এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি রেললাইনের পাশে একটি বিড়ালের ছানার মত প্রাণী ধরা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই প্রাণীটি বিড়াল নয় মেছো বিড়ালের ছানা। তাই বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে যোগাযোগ করে যৌথ ভাবে ছানা দুটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি।’
আরও পড়ুন:
আর সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল বলেন, ‘ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার হওয়ার দুটি মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধারের পর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাচ্চাগুলোকে পর্যবেক্ষণ শেষে উদ্ধারকৃত স্থানের আশপাশেই পুনরায় অবমুক্ত করা হবে। যেহেতু আশপাশেই মা মেছো বিড়ালটি রয়েছে তাই সুবিধামতো সময়ে বাচ্চাগুলোকেও অবমুক্ত করা হবে। রেল লাইনের পাশের ধানক্ষেতের এক পাশের নদী এবং অপর পাশে বেশ কিছু পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। এরকম পরিবেশে মেছো বিড়াল থাকা একেবারেই স্বাভাবিক। কারণ এরা জলাশয়ের ধারেই বসবাস করে। এরা মাছসহ সরীসৃপ জাতীয় বিভিন্ন প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। দিনের বেলা এরা ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকলেও রাতে এরা শিকার ও চলাফেরা করে। এই প্রাণীগুলো পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাণী।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও গত রবিবার (৩০ নভেম্বর) দুর্গাপুরের বালিকান্দি গ্রাম থেকে আরও দুটি মেছো বিড়ালের আমরা উদ্ধার করি। এবং একদিন পর্যবেক্ষণ শেষে বন বিভাগকে সাথে নিয়ে গহীন বনে জলাশয়ের পাশে ছানাগুলোকে অবমুক্ত করি। আজকের বাচ্চাগুলো বেশ বড়। এদেরকেও অবমুক্ত করলে এরা নিজে থেকেই এখন শিকার করতে পারে এবং নিজেদের নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে পারবে।’
নেত্রকোণা বন বিভাগের সদস্য ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুইটি মেছো বিড়ালের বাচ্চা উদ্ধার করেছি। বাচ্চাগুলোকে আমরা যথাযথ স্থানে অবমুক্ত করবো।’





