মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরাগ্রামের হামেলা বেগম। আড়াই বছর আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। দুই ছেলের দিনমজুরির সামান্য আয়ে চলে সংসার। ১১ শতাংশ জমির ওপর ছিলো একমাত্র বসতভিটা। কিন্তু জেলা প্রশাসন নির্ধারিত তরা নদীর সীমানা অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটায় সেই ভিটার অর্ধেকই এখন নদীগর্ভে বিলীন।
ভুক্তভোগী হামেলা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে তো থাকতে পারি না। ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। অন্য জায়গায় এসে থাকতে হয় এখন।’
শুধু হামেলা বেগমই নয়, ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বাড়িঘর হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিজু এন্টারপ্রাইজ নির্ধারিত সীমানা না মেনে বালু উত্তোলন করছে। দিনে ছয় থেকে আটটি ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন তারা। এতে শুধু বসতভিটাই নয়, ঝুঁকিতে তরা সেতু, বিদ্যালয়, মসজিদ এবং মন্দিরও।
স্থানীয়রা জানান, মাটি না কাটার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে তারা। তাদের জায়গা জমি চলে গেছে। এখন তাদের অবশিষ্ট ঘরটুকুও ভেসে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
চলতি বছরের জুনে সাত কোটি ৫১ লাখ টাকায় বালু মহাল ইজারা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ঠিকাদারের দাবি, জেলা প্রশাসন নির্ধারিত সীমানার মধ্যেই বালু তুলছেন তারা।
মানিকগঞ্জ মেসার্স রিজু এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের দেওয়া সীমানা থেকে অনেক দূরে থেকে আমরা মাটি কাটছি। আমাদের যেভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’
সড়ক বিভাগ বলছে, সেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু তুললেই ঝুঁকিতে পড়ে স্থাপনা। আর জেলা প্রশাসনের দাবি, সীমার বাইরে বালু কাটার অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জ সওজ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, ‘এক কিলোমিটারের মধ্যে যদি বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে দেখা যায়, আমাদের ব্রিজের নিচে যে পাইল আছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘নির্ধারিত স্থানের বাহিরে বালি উত্তোলনের সুযোগ নেই। কেউ কিছু করলে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করবো।’
প্রশাসন আইন প্রয়োগে কঠোর না হলে শুধু ভিটেমাটি নয়, নদীপাড়ের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে জানান স্থানীয়রা।





