নাগরিক সাংবাদিকতা
0

'বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে একাকীত্বে সন্তান'

আগেকার দিনে বিচ্ছেদ বেশি হতো নাকি এখন বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে সেই পরিসংখ্যানে যেতে চাই না।

তবে বিচ্ছেদ মানে বরাবরই একটা পরিবারের ভাঙন। যে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী সেই পরিবারের সন্তানেরা। সন্তানের বয়স যদিও বা একটু বেশি হয় তখন সে বুঝতে পারে অন্য সবার মতন তার বাবা-মা একসাথে থাকে না কিন্তু একদমই অবুঝ হলে প্রশ্ন তো জাগেই 'সবার বাবা আছে, আমার বাবা কই?'

এমন প্রশ্ন আট বছর বয়সী ধ্রুবরও। প্রায়ই স্কুল থেকে মা যখন আনতে যায় মন খারাপ করে একই প্রশ্ন 'মা সবার তো বাবা স্কুল থেকে নিতে আসে, আমার বাবা কেনো আসে না'?'। ধ্রুবর মা যদিও বা কিছু একটা বলে ধ্রুবকে বোঝায় তবে নিজেকে বোঝানোর কোনো শব্দই যেনো তার জানা নেই।

তেরো বছর বয়সী নন্দিনী। পরীর মত ছোট্ট একটা মুখ দেখে যে মা নাম রেখেছিলো নন্দিনী, চার বছর হতে না হতেই সেই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত সে। মনে নেই মায়ের চেহারার আদলও। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে তার ঠাঁই হয়েছে বাবার কাছেই। কিছুটা সময় দাদী লালন পালনের দায়িত্ব নিলেও তিনি পরপারে যাবার পর সংসারে এখন শুধুই সে আর তার বাবা। বাবার আদরে অভাব না থাকলেও একটা হাসিখুশি পরিবারের অভাববোধ যেনো এখন নন্দীনিকে খুব তাড়া করে বেড়ায়।

বাবা-মায়ের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধের অভাব, মতবিরোধ, মনোমালিন্য, পারিবারিক সহিংসতা, এসব সন্তানের দেখার চাইতে অনেক শিক্ষিত বাবা-মায়েরাই এখন সেপারেশন কিংবা ডিভোর্সের পথ বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, উভয় পথই শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য ভয়ংকর একাকিত্বের। এছাড়াও বিচ্ছেদের সময় সন্তান কার কাছে থাকবে বাবা নাকি মা?

এমন পারস্পরিক সিদ্ধান্ত না থাকলে দু'পক্ষ থেকেই সন্তানকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টানতে টানতে এই সিদ্ধান্ত যায় কোর্টের কাছে। বিচারক যখন সন্তানের কাছে সিদ্ধান্ত চান সন্তান তখন বলেন বাবা-মা দুজনকে একসাথে নিয়েই থাকতে চায় সে।

এমন উদাহরণও বহু আছে। কিন্তু বাবা-মা তো তখনও তাদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অনড়। শেষমেষ একজনের কাছে সন্তানের থাকার সিদ্ধান্ত এলেও পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়ায়, আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মত বাবা-মায়ের মধুর সম্পর্ক কাছে থেকে দেখতে না পারায় এবং আনন্দ-দুঃখ বাবা মায়ের সাথে ভাগাভাগি করতে না পারায় দিনশেষে সেই প্রভাব পরে শিশুর ওপর।

তাই এই পথ বেছে নেয়ার আগে বাবা-মায়ের অবশ্যই সময় নিতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে, সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি দিতে হবে। এখন বিভিন্ন ক্লিনিকে, ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে কিংবা অনলাইন-অফলাইনেও কাউন্সেলিং করা হয়। প্রয়োজনে দফায় দফায় দম্পতিদের সেই কাউন্সিলিং করতে হবে। এতে করে পরিবার ভেঙে যাওয়ার প্রভাব সমাজে তো পরবেই না সন্তানের উপরও পরবে না। সন্তানেরও নিশ্চিত হবে অনাবিল এক আনন্দের শৈশব।

লেখক: তানজিলা খান মীম, প্রতিবেদক ও সংবাদ উপস্থাপক, এখন টেলিভিশন।