স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর আজ (সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর) প্রথমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজারও নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এসময় নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এপথে চলাচল করা পথচারীরা পড়েন ভোগান্তিতে।
দীর্ঘ দেড় যুগ পর বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে তারেক রহমান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছান। কার্যালয়ের দুই তলায় বারান্দায় এসে তিনি অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
মাইক হাতে তারেক রহমান বলেন, ‘আজ যেহেতু আমাদের এখানে কোনো অনুষ্ঠান নেই, আমরা যদি এখন এই রাস্তাটা বন্ধ করে রাখি, তাহলে সাধারণ মানুষের চলাচলে অসুবিধা হবে। যেহেতু আজ আমাদের এখানে কোনো কর্মসূচি নেই, সেজন্য আমরা চেষ্টা করি যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটা খুলে দেয়ার, যাতে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে। ইনশাআল্লাহ, আপনাদের সঙ্গে—কর্মসূচি যখন দেবো, তখন ইনশাআল্লাহ আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবো।’
আরও পড়ুন:
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারেক রহমান এমন একটা সময়ে আসলেন, যার ঠিক দেড় বছর পেছন ফিরে তাকালেই এক দুঃসহ স্মৃতি দানা বাঁধে দলটির নেতাকর্মীদের ভেতর। তারা বলছিলেন, এই কার্যালয়ের মাটি আঁকড়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত অনেক সহযোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। জীবনের সব ক্ষতি উপেক্ষা করে আগলে ছিলেন নয়াপল্টনকে। সেসব হারানো সহযোদ্ধাদের অনুপস্থিতির বেদনা ভর করেছিলো তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা কর্মীদের মধ্যে। আনন্দও ছিলো ভীষণ। দেড় যুগ ধরে ভার্চুয়ালি যে নেতার বক্তব্য শুনেছেন; নয়াপল্টনের রাজপথে সেই নেতা আজ কার্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত উচিয়ে অভিবাদনে মিশে গেলেন তৃণমূলে। কর্মীদের বার্তা দিলেন ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ গড়ার।
তারেক রহমান বলেন, ‘সকলে দোয়া করবেন। ইনশাআল্লাহ, আমিও দোয়া করি সকলে ভালো থাকুন। আর একটি কথা—আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন, আমরা আমাদের দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, আমরা সবাই সাধ্যমতো দেশের জন্য চেষ্টা করি। কোথাও যদি রাস্তায় কোনো কাগজ পড়ে থাকে, ময়লা হয়ে থাকে, দরকার হলে সেটাও আমরা সরিয়ে দেবো। এভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে আসুন, আমরা দেশটাকে গড়ে তুলি।’
এর আগে, গতকাল (রোববার, ২৮ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ করেন তারেক রহমান। আর আজ সাংগঠনিক কাজে অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন।
কার্যালয়ে প্রবেশের আগ মুহূর্তে তিনি সড়কে অপেক্ষারত কর্মী-সমর্থকদের বলেন, ‘এখন আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, দ্রুত আমরা রাস্তাটা খালি করে দিই, যাতে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারেন। সকলে ভালো থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আমার জন্য দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
এসময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিন ইসলাম তুহিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ অসংখ্য নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, সকালে থেকেই বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হয়েছেন। তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। এখানে কোনো নেতাকর্মীকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। সিএসএফ ঘিরে রেখেছে পুরো কার্যালয়। এছাড়াও পুরো নয়াপল্টন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে কঠোর নজরদারি। এর আগে র্যাবের ‘ডগ স্কোয়াড’ দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফেরেন তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে ঢাকায় লাখ লাখ নেতাকর্মী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব জমায়েত হয়। ঢাকার পূর্বাচলের জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট) এলাকায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। সারা দেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।




