স্মারকলিপিতে নেতারা উল্লেখ করেন, ‘আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা, দলের প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ ও অবস্থান আপনাদের সামনে আনতে চাই। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলীয় জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে যে আলোচনা সামনে এসেছে, সে বিষয়ে আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের আপত্তি জানাচ্ছি। আমাদের আপত্তির ভিত্তি আমাদের দলের ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার প্রশ্ন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিগত এক বছর ধরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বিভাজনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্যান্য দলের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি ও স্যাবোটেজ, এনসিপির ওপর বিভিন্ন অপকর্মের দায় চাপানোর অপচেষ্টা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এবং পরবর্তীতে ছাত্রশক্তি বিষয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার, তাদের অনলাইন ফোর্সের মাধ্যমে এনসিপি ও আমাদের ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যদের চরিত্রহননের চেষ্টা এবং সর্বোপরি, ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যার সহযোগিতা এবং সে সময় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ প্রশ্নে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও আমাদের দলের মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক।’
স্মারকলিপিতে নেতারা আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি একটি গণতান্ত্রিক ও গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র ও সমাজকে এমন একটি পথে এগিয়ে নেয়া, যেখানে মানবাধিকার, ধর্মীয় সহনশীলতা, নারী-পুরুষের সমান-মর্যাদা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার এবং সর্বোপরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অটুট থাকে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এই নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং আমাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, বিগত সময়ে আপনি ও সম্মানিত মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন, সর্বশেষ সংস্কার প্রশ্নে একমত হয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করে সংস্কার বাস্তবায়নে ভবিষ্যৎ রাজনীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং অতীতে আপনি ফেসবুক পোস্ট মারফত সংস্কারের ক্ষেত্রে জামায়াতের দ্বিচারিতা জাতির সম্মুখে উন্মোচন করেছেন।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘কিছুদিন আগেই সারাদেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়ে প্রায় দেড় হাজার জন ব্যক্তির কাছে মনোনয়নপত্র বিক্রি করে দুই দিনব্যাপী কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বাছাই করে ১২৫ জন প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এরপর আবার অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণার সামিল। এছাড়া এই ধরনের জোট আমাদের বহু কর্মী, সমর্থক এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মসহ নতুন ধারার রাজনীতিকে সমর্থন করা বহু সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা তৈরি করবে। যারা একটি নতুন নীতিনিষ্ঠ ও ভবিষ্যতমুখী রাজনীতির প্রত্যাশায় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের আস্থার সঙ্গেও এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, যখনই এই জোটের সম্ভাবনার খবর গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামনে এসেছে, এর পরপরই আমাদের সমর্থনে থাকা কর্মী-সংগঠকসহ একটা বড় সংখ্যক মানুষ আমাদের দলের প্রতি তাদের সমর্থন সরিয়ে নিতে উদ্যত হয়েছেন। যদি আমাদের সমর্থন করা মধ্যপন্থি এবং নতুন রাজনীতি প্রত্যাশা করা মানুষেরা তাদের সমর্থন সরিয়ে নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে পার্টির মধ্যপন্থি সমর্থক ভিত্তি হারাবো। আমরা কোনোভাবেই মনে করি না দীর্ঘমেয়াদে তা আমাদের জন্য লাভজনক হবে। এর মাধ্যমে এনসিপির নিজস্ব মধ্যপন্থি রাজনৈতিক এজেন্সি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সম্মান সহকারে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, দলের যেকোনো জোটনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই নীতিগত প্রশ্নগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হোক এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক জোটে না যাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা হোক। আমরা মনে করি, নীতিগত অবস্থানের ভিত্তিতে কৌশল নির্ধারিত হওয়া উচিত, কৌশলগত কারণে নীতিগত অবস্থান বিসর্জন দেয়া উচিত নয়। এই বক্তব্য আমরা দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্যের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই তুলে ধরছি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে শক্তিশালী দল গড়ে ওঠে দলের অভ্যন্তরের সৎ ও নীতিনিষ্ঠ মতভেদকে গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমেই।’
স্মারকলিপি দেয়া ৩০ নেতা হলেন- এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শামা দেব, সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মো. শওকত আলী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ্, যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক, যুগ্ম মুখ সংগঠক ইমন সৈয়দ, সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মো. ওয়াহিদ উজ জামান, যুগ্ম মুখ সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম সদস্যসচিব মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য জাওয়াদুল করিম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মো. মুরসালীন, কেন্দ্ৰীয় সদস্য তারিক আদনান মুন ও কেন্দ্রীয় সদস্য মো. ইমরান হোসেন।





