মার্টিন লুথারের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ থেকে তারেক রহমানের ‘উই হ্যাভ এ প্ল্যান’, কে এই কিংবদন্তি?

মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ থেকে তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’
মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ থেকে তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ | ছবি: এখন টিভি
0

দীর্ঘ ১৭ বছর পর নিজ দেশের মাটিতে পা রেখেই রাজধানী ঢাকার ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনায় এক আবেগময় বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)। আজ (বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫) লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তিনি বিশ্ববিখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র-এর (Martin Luther King Jr.) কালজয়ী উক্তি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ (I Have a Dream) স্মরণ করে ঘোষণা করেছেন— ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ (I Have a Plan)। তবে, বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ ত্যাগের আগে ফের তিনি মাইকে এসে বলেন, ‘উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান, উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান।’ এই বক্তব্যের পর থেকে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল জেগেছে, কে ছিলেন এই মার্টিন লুথার কিং?

কে এই মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র? (Who is Martin Luther King Jr.)

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ছিলেন একজন আমেরিকান ব্যাপটিস্ট ধর্মযাজক এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের (Civil Rights Movement) অবিসংবাদিত নেতা। ১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করা এই নেতা আজীবন কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার ও বর্ণবৈষম্য (Racial Discrimination) বিলোপের লড়াই করেছেন।

ঐতিহাসিক ভাষণ: ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের সামনে তিনি তার বিখ্যাত ভাষণ ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ প্রদান করেন। সেখানে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক আমেরিকার, যেখানে মানুষকে তার গায়ের রঙ দিয়ে নয় বরং চারিত্রিক গুণাবলী দিয়ে বিচার করা হবে।

নোবেল জয়: মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে (Non-violence Movement) বিশ্বাসী কিং ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার (Nobel Peace Prize) লাভ করেন।

মৃত্যু: ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে এই মহান নেতা নিহত হন।

আরও পড়ুন:

তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ (Tarique Rahman’s ‘I Have a Plan’)

দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রিয় ভাই বোনেরা, মার্টিন লুথার কিং নাম শুনেছেন না আপনারা? তার একটি বিখ্যাত ডায়ালগ আছে—“আই হ্যাভ আ ড্রিম।” আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সবার সামনে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, “আই হ্যাভ আ প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি”। আজ এ পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যদি সেই প্ল্যান, সেই পরিকল্পনা, সেই কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে হয়, প্রিয় ভাই-বোনেরা এ জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত আছেন, প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে।’

তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যাকে অনেকেই বিএনপির আগামীর রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা (State Reform Roadmap) হিসেবে দেখছেন।

মার্টিন লুথার কিং |ছবি: সংগৃহীত

আরও পড়ুন:

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ১৯৬৩ সালের সেই কালজয়ী ভাষণ ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ (I Have a Dream)-এর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিখ্যাত অংশগুলোর বাংলা অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো:

‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের মূল অংশসমূহ

১. বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে: "আমি আজ আপনাদের বলছি, আমার বন্ধুরা, যদিও আমরা আজ এবং আগামীকালের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, তবুও আমার একটি স্বপ্ন আছে। এটি এমন এক স্বপ্ন যার শিকড় আমেরিকান স্বপ্নের গভীরে প্রোথিত।"

২. সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব নিয়ে: "আমার একটি স্বপ্ন আছে যে, একদিন এই জাতি জেগে উঠবে এবং তার আদর্শের প্রকৃত অর্থ অনুযায়ী বেঁচে থাকবে: 'আমরা এই সত্যকে স্বত:সিদ্ধ বলে ধরে নিচ্ছি যে— সকল মানুষ সমানভাবে সৃষ্টি হয়েছে'।"

৩. পরবর্তী প্রজন্ম ও বৈষম্যহীনতা নিয়ে (সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ): "আমার একটি স্বপ্ন আছে যে, আমার চার সন্তান একদিন এমন এক জাতিতে বাস করবে, যেখানে তাদের গায়ের রঙ দিয়ে নয়, বরং তাদের চরিত্রের গুণাবলি দিয়ে বিচার করা হবে। আজ আমার সেই স্বপ্ন আছে!"

৪. ঐক্যের ডাক: "আমার একটি স্বপ্ন আছে যে, একদিন আলাবামার সেই কুখ্যাত বর্ণবাদীরা... ছোট কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে এবং মেয়েরা ছোট সাদা ছেলে এবং মেয়েদের সাথে ভাই ও বোনের মতো হাত মিলিয়ে চলতে সক্ষম হবে।"

৫. স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা: "যখন আমরা স্বাধীনতাকে বাজতে দেব, যখন আমরা প্রতিটি গ্রাম এবং প্রতিটি পাড়া থেকে, প্রতিটি রাজ্য এবং প্রতিটি শহর থেকে স্বাধীনতাকে ধ্বনিত হতে দেব, তখন আমরা সেই দিনটিকে ত্বরান্বিত করতে পারব যখন ঈশ্বরের সকল সন্তান— কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ, ইহুদি ও অ-ইহুদি, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক— সবাই হাত মিলিয়ে নিগ্রোদের সেই পুরনো আধ্যাত্মিক গানটি গাইতে পারবে: 'অবশেষে মুক্তি! অবশেষে মুক্তি! সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা অবশেষে মুক্ত!'"

মার্টিন লুথার কিং ও তারেক রহমানের ‘প্ল্যান’ সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র কে ছিলেন?

উত্তর: তিনি ছিলেন আমেরিকার একজন কিংবদন্তি নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারী নেতা এবং ধর্মযাজক, যিনি কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার ও বর্ণবৈষম্য দূর করতে অহিংস আন্দোলন করেছিলেন।

প্রশ্ন: মার্টিন লুথার কিং এর ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের মূল কথা কী ছিল?

উত্তর: এই ভাষণের মূল কথা ছিল সাম্য। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক সমাজের, যেখানে মানুষ গায়ের রঙ দিয়ে নয় বরং চারিত্রিক গুণাবলী দিয়ে বিচার্য হবে।

প্রশ্ন: তারেক রহমান কেন মার্টিন লুথার কিং এর উক্তি ব্যবহার করেছেন?

উত্তর: তারেক রহমান সম্ভবত তার রাজনৈতিক লক্ষ্য ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য বড় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্নকে বিশ্ববিখ্যাত এই নেতার সংগ্রামের সাথে তুলনা করতে উক্তিটি ব্যবহার করেছেন।

প্রশ্ন: তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ (I Have a Plan) বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: এটি মূলত বিএনপি’র রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা। দেশের উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাকে তিনি ‘প্ল্যান’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন: মার্টিন লুথার কিং কত সালে নোবেল পুরস্কার পান?

উত্তর: তিনি ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

প্রশ্ন: তারেক রহমানের এই ভাষণটি কোথায় দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর: দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার পর রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এই ভাষণ দেন।

প্রশ্ন: মার্টিন লুথার কিং এর মৃত্যু হয়েছিল কীভাবে?

উত্তর: ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে একজন আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।

প্রশ্ন: তারেক রহমানের ‘প্ল্যান’ বাস্তবায়নে তিনি কার সহযোগিতা চেয়েছেন?

উত্তর: তিনি জানিয়েছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক এবং যারা গণতন্ত্রের পক্ষে আছেন, তাদের সবার সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণটি কোথায় এবং কবে দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর: ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের উপস্থিতিতে এই ভাষণ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: তারেক রহমানের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের সাথে এই প্ল্যানের সম্পর্ক কী?

উত্তর: বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবই মূলত তারেক রহমানের সেই ‘প্ল্যান’ বা পরিকল্পনার মূল ভিত্তি, যা রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের কথা বলে।

প্রশ্ন: মার্টিন লুথার কিং কার আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন?

উত্তর: তিনি ভারতের মহাত্মা গান্ধীর অহিংস (Non-violence) এবং সত্যাগ্রহ আন্দোলনের আদর্শে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন।

প্রশ্ন: তারেক রহমানের ‘উই হ্যাভ এ প্ল্যান’ স্লোগানটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: এটি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতির একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং হিসেবে কাজ করছে।

প্রশ্ন: মার্টিন লুথার কিং এর পূর্ণ নাম কী?

উত্তর: তার পূর্ণ নাম হলো মাইকেল কিং জুনিয়র, তবে তিনি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

প্রশ্ন: তারেক রহমান কত বছর পর দেশে ফিরে এই ভাষণ দিলেন?

উত্তর: দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি এই ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন।

প্রশ্ন: এমার্টিন লুথার কিং ও তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্যে সাধারণ মিল কী?

উত্তর: দুই নেতার বক্তব্যের মধ্যেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতির মিল রয়েছে।


আরও পড়ুন:


এসআর