ঋণের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন ব্যয়কে দুষছেন অর্থনীতিবিদরা

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক | ছবি: সংগৃহীত
0

বিদেশি ঋণের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে সরকারের ঋণ ছাড়িয়েছে ২১ লাখ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব আয়ের দুর্বলতা এবং উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন ব্যয়কেই দুষছেন অর্থনীতিবিদরা। সংকট কাটাতে ঋণ ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।

অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ নানা কারণে গতি ফিরছে না ব্যবসা-বাণিজ্যে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমছে রাজস্ব আয়। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ছে সরকার। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সরকার যে ঋণ নিচ্ছে তার বড় অংশই যাচ্ছে পুরনো ঋণ ও সুদ পরিশোধে।

বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট ২০২৫ এর তথ্য বলছে, গেলো বছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলারে। পাঁচ বছরে আগে এর পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৪২ শতাংশ।

সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থ বিভাগের ঋণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রথমবারের মতো সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ কোটি টাকার ওপরে। যা গেলো বছরের ১৮ দশমিক ৮৯ ট্রিলিয়নের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। এই অর্থনীতিবিদ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব আয়ের দুর্বলতা এবং উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন ব্যয়ে বেড়েছে ঋণ।

আরও পড়ুন:

সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ যে রাজস্ব আমরা আহরণ করি এর পুরোটাই কিন্তু চলে যায় আমাদের রাজস্ব ব্যয়ে। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী যেটা আছে যাকে আমরা এডিপি বলি পুরোটাই হয়ে যাচ্ছে ঋণ-নির্ভর। যদি আমাদের অভ্যন্তরীণ আয় আমরা বাড়াতে পারতাম তাহলে কিন্তু আমাদের রাজস্ব ব্যয় করেও উদ্বৃত্ত কিছু থাকতো। সেটা আমরা তখন আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দিতে পারতাম। তাহলে ঋণ আমাদের কম নিতে হতো।’

ঋণ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মূলত, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী নানা প্রকল্পের কারণে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণের বিষয়ে আগের চেয়ে কঠিন শর্ত দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীরা। ফলে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের ক্ষেত্রে বোঝা বাড়ছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক মাজেদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের ঋণ চুক্তিতে কিন্তু আসলে ঋণ প্রদানকারী দেশগুলো তদারকি করে, ফিজিক্যালিটি স্টাডি করে, তারা পরামর্শক হিসেবে কাজ করে, তারা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে থাকে এবং তারা ঠিকাদার হিসেবেও কাজ করে। কিন্তু অন্যান্য দেশে ঋণ চুক্তিতে এ বিষয়গুলো নেই। সেজন্য ঋণ কর্মসূচীর ভেতরে যে প্রকল্পগুলো করা হয় তার খরচ অত্যন্ত বেড়ে যায়।’

এডিবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বৃদ্ধির হার সবচেয়ে দ্রুত, যেখানে সরকারি ও সরকারি-গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ ১৩ বছরে বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি।

ইএ