জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে বিকেল ৩টার দিকে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে আনা হয়। পরে বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে হাদির মরদেহ ফ্রিজার ভ্যান থেকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
ওসমান হাদিকে দাফনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে কবর প্রস্তুত করা হয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কবর খননের কাজ শুরু হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল দলের সদস্যরা।
ওসমান হাদির দাফনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, প্রক্টর ড. সাইফুদ্দিন আহমদ, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বক্কর, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমসহ সংগঠনটির একাধিক নেতা।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দুপুর আড়াইটায় লাখো জনতার উপস্থিতিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা পড়িয়েছেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।
আরও পড়ুন:
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হাদির জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে দুপুর ১টায় হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে মরদেহ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়। দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর মরদেহ নেয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)।
হাদির জানাজা ঘিরে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে মানুষ। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যেন ঢল নামে মানুষের। বেলা ১১টার পর থেকে দেখা যায়, ফার্মগেট, আসাদ গেট হয়ে দলে দলে মানুষ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ঢুকছেন। কারো হাতে, কারো মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা স্লোগান দেন— ‘আমরা সবাই হাদি হবো যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’।
ওসমান হাদির জানাজা উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের প্রবেশপথগুলোতে নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জানাজায় অংশ নিতে আসা প্রত্যেক ব্যক্তিকে কয়েক স্তরে তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। টহলের দায়িত্বে আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার মোতায়েন দেখা গেছে।
আরও পড়ুন:
ওসমান হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।
গতকাল (শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওসমান হাদির মরদেহ দেশে আসে। এর পর তা রাখা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের হিমঘরে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয় তাকে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল; দীর্ঘ এক যাত্রা, যার শেষটা আর দেশে ফেরা হলো না। তিন দিনের জীবন-মৃত্যুর লড়াই শেষে হার মানেন এ তরুণ নেতা।





