রপ্তানিতে চ্যালেঞ্জ; প্রণোদনা, নতুন বাজার সৃষ্টিসহ পণ্য বৈচিত্র্যকরণের তাগিদ

মোহাম্মদ হাসান আরিফ ও তৈরি পোশাক শিল্প
মোহাম্মদ হাসান আরিফ ও তৈরি পোশাক শিল্প | ছবি: এখন টিভি
0

বিগত বছরগুলোতে দেখানো রপ্তানি আয়ের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজার সম্প্রসারণে নানামুখী চ্যালেঞ্জ দেখছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো। আয় বাড়াতে সরকারি প্রণোদনাসহ নতুন বাজার সৃষ্টি ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে প্রায় দুইশর বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়েছে ৮১২ প্রকার পণ্য। যেখান থেকে আয় হয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলার।

এরমধ্যে নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টসসহ সর্বোচ্চ রপ্তানির তালিকায় থাকা ৩০টি পণ্য থেকে আয় এসেছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এই আয় ঊর্ধ্বমুখী, বলছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।

দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও গ্রেট ব্রিটেন। আরএমজির বাইরে চামড়া, কৃষি, পাট, তুলা, হোম টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রপ্তানি হয় ইউএস, ভারত, জাপান, নেদারল্যান্ডস, চীন, সৌদিআরব, ইউএই, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, তুর্কি, সুদান ও সিঙ্গাপুরে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮.৬৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় জার্মানি ও যুক্তরাজ্য তৃতীয় স্থানে।

এছাড়াও স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস রপ্তানি আয়ের শীর্ষে থাকলেও গত তিন অর্থবছরে এসব দেশ থেকেও রপ্তানি আয় ওঠানামা করেছে। অন্যদিকে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে একই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির প্রায় ৪৪ ভাগ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যাচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে যাচ্ছে ১৮ ভাগ। কাজেই আমরা এসব জায়গা কখনই তাদেরকে অবহেলা করতে চাই না। তাদের মার্কেট আমাদের ধরে রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন:

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য নিয়ে বিশ্বের ১৫০টি দেশে রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য সামনে রেখে এই খাত এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে এই সম্ভাবনার বিপরীতে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার না থাকা, কারখানায় অদক্ষ শ্রমিক ও কোম্পানির উন্নত ব্যবস্থাপনার অভাবসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, ‘যখন এলডিসির ব্যাপারগুলো আসবে তখন অনেক সুযোগ সুবিধা কিন্তু কমে যাবে। সেক্ষেত্রে সরকারের বিকল্প কিছু ভাবা উচিত।’

বিকেএমইএ ও বিজিএমইএয়ের অন্তর্ভুক্ত ২ হাজার ৫০০ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রপ্তানিতে নিয়মিত রয়েছে। তবে বছর ঘুরতে সেখান থেকেও প্রায় ৫০০ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। এই খাত বাঁচিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি করছেন তারা। অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে দেখানো রপ্তানি আয়ের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল ছিল বলেও অভিযোগ তাদের।

বিকেএমইএয়ের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘হতে পারে তাকে ১০ বছরের লোন পরিশোধের সুযোগ দিতে হবে। রিসিডিউল করে দিতে হবে। কাউকে হয়তো ১৫ বছর করতে হবে।’

রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে নানামুখী চ্যালেঞ্জ দেখছে ইপিবি। তবে আয় বাড়াতে সরকারি প্রণোদনাসহ নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে বলছেন অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশ্লেষকরা।

বিআইডিএসয়ের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, ‘যদি নতুন পণ্য বাজারে আসে তাহলে তাকে একটা প্রণোদনায় আনা যেতে পারে। অন্যভাবে সেটা হচ্ছে জব ক্রিয়েশন করতে হবে।’

একক নির্ভরশীল খাত বিবেচনায় রপ্তানি আয়ের বড় অংশ তৈরি পোশাক শিল্প। নিয়মিত গার্মেন্টস বন্ধ হতে থাকায় একদিকে কমছে রপ্তানি আয়, অন্যদিকে ঝুঁকিতে বাড়ছে কর্মসংস্থানের।

রপ্তানি আয় বাড়াতে বাজারে নতুন পণ্য নিয়ে আসার বিকল্প দেখছেন না অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।

সেজু