চাঁদপুরে ১৭৩ ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষার্থী-অভিভাবক

চাঁদপুরে বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল ও এলাকার বিভিন্ন পুরাতন ভবন | ছবি: এখন টিভি
0

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ভূমিকম্পে আতঙ্ক বেড়েছে চাঁদপুরে। জেলার ১৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, আবাসিক বা অনাবাসিক ভবনের নেই কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এদিকে, শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কংগাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাইরে থেকে স্বাভাবিক দেখা গেলেও ভবনের ভেতরে ফাটল আর ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র। খসে পড়া আস্তরণের ভেতর বের হয়ে আছে মরিচাধরা রড।

১৯৯০-এর দশকে নির্মিত এ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ২০২৩ সালে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর নতুন করে দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। দুর্ঘটনার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসাও বন্ধ করে দিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ভূমিকম্পে তাদের স্কুলের ফ্যান খুলে পড়েছে। তারা শ্রেণিকক্ষে থাকলে একটি দুর্ঘটনা ঘটত। ভবন ধসের আতঙ্কে তাদের লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা জানায়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ২০২৩ সালে এ বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই বিদ্যালয়ের সকলে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের ফলে তাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে বলে জানান তারা।

কংগাইশের মতো এমন দুরবস্থা জেলার আরও বেশ কিছু স্কুলের। ৮ উপজেলার প্রায় ১৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনকে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা ভূমিকম্পের ফলে নতুন করে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আরও অনেক ভবন। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।

আরও পড়ুন:

চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আমার চেষ্টা করছি স্থানীয় পর্যায় ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায়, আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো যেন সংস্কারের মাধ্যমে স্বাভাবিক পাঠদান চলমান রাখা যায়।’

বিদ্যালয়ের তালিকা থাকলেও জেলার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে নেই কোনো তথ্য। চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রয়েছে বহু পুরনো সরকারি-বেসরকারি ভবন। যেগুলো দুর্যোগে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো রাখা ঠিক হবে না। এসব ভবন অনেক পুরনো। যেকোনো সময় ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্যোগে ক্ষতি হ্রাসে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের তাগিদ ফায়ার সার্ভিসের।

এরইমধ্যে শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তে মাঠে নামছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপ-সহকারী পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘যদি অনেক পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে ভূমিকম্পের ফলে বা অন্য যেকোনো কারণে এগুলো ধসে পড়তে পারে। আমাদের যে সব এলাকায় এ ধরনের ভবন রয়েছে যরা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করে নেয়া।’

চাঁদপুর পৌর প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর আমরা যখন জানতে পেরেছি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তখন আমরা একটি কমিটি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কমিটি খুঁজে বের করবে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে কিনা। আমার ধারণা অবশ্যই আছে। সামনের দিনে আমরা বের করতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

শহরজুড়ে নতুন ভবনের পাশাপাশি রয়েছে শত বছরের পুরনো অসংখ্য ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ সেসব ভবন শনাক্ত ও অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

এফএস