উড়োজাহাজ ক্রয় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, কূটনীতিতে প্রভাব নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন | ছবি: এখন টিভি
1

বাংলাদেশের আকাশে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের দ্বৈরথ। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত জানালেন, এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনা না হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য সম্পর্ক ও আমদানি-রপ্তানি চুক্তির আলোচনায় প্রভাব পড়তে পারে। যদিও গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দাবি করলেন, উড়োজাহাজ কেনা না কেনা ব্যাবসায়িক সমঝোতার বিষয়। যা কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না।

বোয়িংয়ের বি৭৮৭ মডেলের বিমানটির দাম প্রায় ৩৩৮ মিলিয়ন ডলার। আর এয়ারবাসের ওয়াড-বডি এ৩৫০-৯০০। দাম প্রায় ৩১৭ মিলিয়ন ডলার।

কার্যত হাজার হাজার কোটি টাকার উড়োজাহাজ কেনাবেচা নিয়েই ঢাকাকে ঘিরে একধরনের কূটনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে এখন কোনো এয়ারবাস নেই। যে ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে তার ১৪টিই বোয়িংয়ের। বিমানের বহরের জন্য নতুন কেনা উড়োজাহাজগুলো এয়ারবাস হোক- চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের যুক্তি, ইউরোপ বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজার। আবার ১৭.৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে।

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আছে শক্তিশালী অবস্থান। গেল এপ্রিলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের পর, বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ বাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর। শুল্ক কমানোর আলোচনায় বোয়িং থেকে আরও ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ। যার প্রথমটি আসবে ২০২৯ সালে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণাও আসে। বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি যখন এ পর্যায়ে, তখন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রশ্ন ছিলো, এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার যে অনিশ্চয়তা, তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি?

আরও পড়ুন:

জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবন বা ব্যবসায়িক জীবনের মতোই সব সিদ্ধান্তের একটা স্বাভাবিক মেজাজ থাকে যার কিছু প্রভাব পরিবেশের ওপরও পড়ে। এটা ঠিক আমাদের পারস্পরিক স্বার্থের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমরা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক যোগাযোগটা অব্যাহত রাখি। কিন্তু যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এটার কিছু পরিণতি বা প্রভাব থাকবে? আমি বলবো, হ্যাঁ থাকবে।’

যদিও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একে একটি বাণিজ্য চুক্তি হিসেবেই দেখছেন। তার দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই রাষ্ট্রদূত চেষ্টা করবেন তার দেশের যে ব্র্যান্ড আছে সেটা যেন বিক্রি হয়, এটা তার দায়িত্ব। আমি মনে করি উনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা আমি একেবারেই মনে করি না যে, একটা কমারশিয়াল লেন যেটাতে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি এবং আমাদের যে ফ্লিট সাইজ, তাতে করে আমাদের জন্য কোনটা সুবিধা হবে সেটা আমাদের বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবে।’

বিমানের বহরে বৈচিত্র্য আনতে বোয়িংয়ের বাইরে এয়ারবাস থেকেও উড়োজাহাজ কেনার পক্ষে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। যদিও রক্ষণাবেক্ষণের বাড়তি যে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা- তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই পরাশক্তিগুলোর বিলিয়ন ডলারের এ বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় কূটনৈতিক মুন্সিয়ানায় দেখাতে হবে বাংলাদেশকেই।

এসএস