দিনের আলো কিংবা রাতের অন্ধকার অপহরণ আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায়। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দেশটির নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা। এরই মধ্যে অপহরণ আতঙ্কে নাইজার রাজ্যের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত সপ্তাহে নাইজেরিয়ার কেব্বি রাজ্যের একটি স্কুল থেকে ২৫ নারী শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। ধর্মীয় স্থাপনা ও বাড়িতেও তৎপরতা বাড়ছে অপহরণকারীদের। সম্প্রতি জামফারা রাজ্যের একটি বাড়ি থেকে নারী-শিশুসহ ৬৪ জনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসী দল। এছাড়া, একটি গির্জায় হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যার পাশাপাশি ৩৮ উপাসককে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
বাড়তে থাকা অপহরণের ঘটনাগুলোর জন্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী। এদিকে, জিম্মিদের উদ্ধারে ও অপহরণকারীদের ধরতে প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে নাইজেরিয়া সরকার।
নাইজার রাজ্যের গভর্নর মোহাম্মদ উমরু বাগো বলেন, ‘এটা দোষারোপের সময় নয়। কীভাবে অপহৃতদের উদ্ধার করা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি শিশুদের উদ্ধারে মনোনিবেশ করতে।’
তবে সরকারের আশ্বাসেও স্বস্তি মিলছে না জনজীবনে।
নাইজেরিয়ার একজন অধিবাসী বলেন, ‘আমার মনে হয় না বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ নিরাপদ অনুভব করছে। কেউ স্বস্তিতে ঘুমাতেও পারছে না। ছোট কোনো শব্দ পেলেও ভয়-আতঙ্কে মানুষ জেগে উঠছে।’
আরও পড়ুন:
আরেকজন বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে বর্তমান সরকার পরিস্থিতি উত্তোরণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
রোববার ভ্যাটিকানে ভক্তদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য রোমান ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ লিও চতুর্দশ নাইজেরিয়ার ক্যাথলিক স্কুলের অপহৃত শিশু ও স্কুলকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির আবেদন জানান।
ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ লিও চতুর্দশ বলেন, ‘অপহৃতদের অবিলম্বে মুক্তি নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করি এবং গির্জা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি স্থাপনা যাতে নিরাপদ থাকে এ প্রার্থনা করি।’
নভেম্বরের শুরুতে নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর হওয়া নিপীড়ন দমাতে দেশটিতে মার্কিন সেনাবাহিনী পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নাইজেরিয়ার সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, দেশটির বেসামরিক মানুষদের ওপর হওয়া হামলাগুলোকে ধর্মের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা সমীচীন নয়।
মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থা এসিএলইডির মতে, এ বছর নাইজেরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কমপক্ষে ২ হাজার বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।





