এসএমআর প্রযুক্তি নির্ভর পারমাণবিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

প্রতীকী ফটো
প্রতীকী ফটো | ছবি: সংগৃহীত
0

যুক্তরাজ্যের নর্থ ওয়েলসে দেশের ইতিহাসে প্রথম এসএমআর প্রযুক্তি নির্ভর পারমাণবিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তবে স্টারমারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়েছে ওয়াশিংটন। কারণ মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বদলে সেখানে ৩টি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের চুক্তি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ব্রান্ড রোলস-রয়েজ।

নিউক্লিয়ার এসএমআর বা স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর হচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি, যেখানে একটি ফ্যাক্টরির মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব। পরীক্ষিত না হলেও এ ধরনের রিঅ্যাক্টর বা চুল্লি থেকে তুলনামূলক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

এই স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তির ব্যবহার করে ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে স্টারমার প্রশাসন। নর্থ ওয়েলসের অ্যাঙ্গেলসি দ্বীপে 'উইলভা নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন' নামের ওই পারমাণবিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের খরচ হবে ৩৩৬ কোটি ডলার, বসানো হবে ৩টি পারমাণবিক চুল্লি।

যদিও এই প্রকল্প নিয়ে মন কষাকষি শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে। ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহের তুঙ্গে ছিল এই পাওয়ার প্ল্যান্ট। মার্কিন কোনো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ার জন্য স্টারমার প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছিলো ওয়াশিংটন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছে ব্রিটিশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোলস-রয়েজ। গাড়ি নির্মাতা হিসেবে জনপ্রিয় হলেও পারমাণবিক চুল্লির ডিজাইনে দক্ষতার নজির রাখতে চায় তারা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, নয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩টি ক্ষুদ্র পারমাণবিক চুল্লি থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে তা ৩০ লাখ বসতবাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যাবে।

আরও পড়ুন:

২০৩০ সালে নাগাদ এই বিদ্যুৎ যোগ করা হবে ন্যাশনাল গ্রিডের সঙ্গেও। প্রকল্পের আওতায় সৃষ্টি হবে ৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান। কোটি কোটি পাউন্ড বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

ওয়েলসের উইলফা এলাকায় একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল যা ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। যা সংস্কার করে সেখানেই বড় পরিসরে একটি প্রকল্প নির্মাণে আগ্রহ দেখাচ্ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই স্টারমারের ঘোষণা আসার পর এক্স বার্তায় এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেন্স বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছি। এই একই সাইটে নিরাপদ জ্বালানি সরবরাহের জন্য আরও বিকল্প রয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করে জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বড় পদক্ষেপ নিতে চাইলে তার জন্যও বিকল্প পথ আছে। এখন, বড় পরিসরের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে স্টারমার প্রশাসন কি সিদ্ধান্ত নেবে তার অপেক্ষায় আছি। আমরা চাই যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হোক। কিন্তু চড়া দামে জ্বালানি উৎপাদন একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের জ্বালানিখাতে অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্রিটেন ছোট পরিসরে এসএমআর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করতে যায়। বড় পরিসরে এরকম একটি প্রকল্প বানাতে কয়েক যুগ লেগে যেতে পারে।

স্টারমার প্রশাসন দাবি করছে, পারমাণবিক প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে ভবিষ্যৎ বৃহৎ পরিসরের প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে যুক্তরাজ্যের। ২০২৬ এর মধ্যে এ ধরনের একটি প্রকল্প নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জিবি এনার্জি-নিউক্লিয়ার দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।

সেজু