সন্তানকে নির্যাতনের পর অপহরণের অভিযোগ, মামলা নেননি পুলিশ!

সিংগাইর থানা
সিংগাইর থানা | ছবি: এখন টিভি
0

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দুই সন্তানকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ- এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের দাবি, অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে মামলা হিসেবে নিলে আজ হয়তো ‘আপন’-কে (৮) অপহরণ করতে পারত না অভিযুক্ত বাবা রুবেল।

ভুক্তভোগীর নানা আব্দুল আহাদ জানান, তার মেয়ে মুক্তা বেগমের সঙ্গে প্রায় সাত বছর আগে সিংগাইরের বাসিন্দা রুবেলের বিয়ে হয়। এটি ছিল মুক্তার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম সংসারে ‘আপন’ নামে এক ছেলে এবং দ্বিতীয় সংসারে ‘আলী হোসেন’ (৬) নামে আরেক পুত্রসন্তান রয়েছে।

বিয়ের পর থেকেই রুবেল যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী মুক্তাকে মারধর করত বলে অভিযোগ। সংসারের কথা চিন্তা করে তিন মাস আগে মুক্তা সৌদি আরব চলে যান। এরপর থেকেই রুবেল তার কাছে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে।

গত ৫ নভেম্বর রাতে রুবেল তার দুই সন্তান আপন ও আলীকে মারধর করে গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা চালায়। সেই ভয়াবহ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে সৌদি প্রবাসী স্ত্রী মুক্তাকে পাঠায় এবং টাকার জন্য হুমকি দেয়। মুক্তা সেই ভিডিও পরের দিন সকালে তার বাবার কাছে পাঠায়। পরে মুক্তার বাবা-মা ৭ তারিখ দুপুরে নাতিদের আনতে গেলে রুবেলের মা দিতে অস্বীকার করলে তারা চলে আসেন।

আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমি ৯ নভেম্বর সিংগাইর থানায় গিয়ে সব খুলে বলি। তখন এসআই সিদ্দিকুর রহমান লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। অভিযোগের পর পুলিশ আপনকে উদ্ধার করে দিলেও আলী হোসেনকে উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ আমায় বলেন, এটা রুবেলের নিজের সন্তান তাকে নিতে হলে আইনিভাবে নিতে হবে। আমি মামলা করতে চাইলে পুলিশ নানা অজুহাতে নেয়নি।’

আরও পড়ুন:

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ যদি তখন মামলা নিত, রুবেলকে ধরত, তাহলে আজ আমার নাতিকে আর অপহরণ করতে পারত না। তারা শুধু উদ্ধার করে দায়িত্ব শেষ মনে করেছে, কিন্তু আমাদের ভয়টা বুঝলো না। রুবেল টাকার জন্য তাদেরকে মেরে ফেলতে পারে।’

জানা যায়, আজ (বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ভাড়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খেলতে থাকা অবস্থায় রুবেল হঠাৎ এসে সিএনজি অটোরিকশায় করে তার বড় ছেলে আপনকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। স্কুলের বাচ্চারা পরে আমাদেরকে জানায় যে, ওর বাবা ওকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে শিশুটির কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনার পর আহাদ মানিকগঞ্জ সদর থানায় নাতিকে অপহরণের অভিযোগে রুবেলের বিরুদ্ধে আরেকটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

এদিকে দুই সন্তানকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি দুই শিশুকে বেধড়ক মারধর করছে ও গলা চেপে ধরছে। ছেলেদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নাকে রক্ত এসে পড়েছে।

এ বিষয়ে এসআই মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনকে উদ্ধার করে দিয়েছি। আলী হোসেন রুবেলের নিজ সন্তান হওয়ায় তার কাছে রেখেছি। রুবেল বলেছেন, স্ত্রী টাকা দেয় না, তাই তাকে ভয় দেখাতে হত্যাচেষ্টার ভয় দেখিয়েছি।’

হত্যাচেষ্টার ভিডিও থাকা এবং অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পরও মামলা না নেয়া ও আসামিকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত ছাড়া মামলা নেব কীভাবে?’

সদর থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি পুলিশ সুপার ইয়াছমিন আক্তার স্যারকে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ওসি সিংগাইরকেও অবহিত করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম বলেন, ‘ঘটনাটি আমি আজকেই শুনলাম। সদর থানার ওসি আমাকে জানালেন। অভিযুক্ত রুবেলকে থানায় আসতে বলেছি। ৩০৭ ধারা আইনে হত্যাচেষ্টা মামলা রুজু করার প্রক্রিয়া চলছে।’

এসএস