অফিস সকাল সাড়ে ৭ কিংবা ৮টায় হলেও ৯টা-১০টা কিংবা ১১টায় আসার অনিয়মই যেন নিয়মে রূপ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মো. মর্তুজা মেডিকেল সেন্টারের নিত্যদিনের চিত্র এটি।
এমনও চিকিৎসক আছেন, ৪০ বছর ধরে কর্মরত মেডিকেল সেন্টারে। প্রতি মাসে নেন বেতন। কিন্তু সহকর্মীরা চেনেন না তাকে। জানা যায়, ডা. ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত এম এ সালামকে খণ্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মিরপুরে বসেই চিকিৎসা দেয়ার জন্য। অথচ মিরপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আবাসিক হল বা কোয়ার্টার কিছুই নেই।
অনেক ডাক্তার আছেন একইদিনে ৩ শিফটের ডিউটি করে পরের ২ দিন ছুটি কাটান। ৯৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর কে কখন আসেন-যান তার কোনো তথ্য নেই খোদ চিফ মেডিকেল অফিসারের কাছেও।
ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ তানভীর আলী বলেন, ‘কখন কে আসে যায় এর কোনো তথ্য নাই। অ্যানালগ সিস্টেম।’
ওষুধ নির্ধারিত তাপমাত্রায় না রাখলে তার গুণগতমান নষ্ট হবার শঙ্কা থাকে। কিন্তু এখানে তার কোন ব্যবস্থা নেই। এভাবেই যত্রতত্র রাখা ওষুধগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবা নিয়ে থাকেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সংখ্যক মানুষ পাশের ঢাকা মেডিকেল, পিজি হাসপাতাল এবং ইবনে সিনায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি আজকে এসেছিলাম চর্ম রোগের বিষয়ে দেখানোর জন্য। তো ওনারা জানালেন এখানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কেউ নেই এখানে।’
শামসুন নাহার হল সংসদের জিএস সামিয়া মাসুদ মম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের খুব কাছে ডিএমসি থাকায় এ জিনিসগুলোকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তেমন পাত্তা দিচ্ছে না, কর্তৃপক্ষও গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রশাসনও গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাকসুতে যারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, নির্বাচনের আগে তাদের ইশতেহারে ছিল '৩ বেলা নাপা সেন্টার'কে সত্যিকারে মানসম্মত মেডিকেল সেন্টারে রূপ দেয়া। কিন্তু ২ মাসে তার কতটুকু করলো তারা?
ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এবং আমরা আশা করবো প্রশাসন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে এখানে যে দক্ষ জনবল দরকার সেটিও দ্রুত সার্কুলার দেয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দিবে।’
ডাকসুর স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘আমাদের ইশতেহারেও রেখেছিলাম। এখন সেগুলোর বিষয়ে কোলাবোরেট করা হচ্ছে।’
উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারটিকে। মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে হয়ত আমরা সার্বিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখবো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্তুজা মেডিকেল সেন্টার সংস্কারে প্রায় ৩ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তুর্কিয়ে ভিত্তিক সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা 'টিকা'। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হলেও সেটিও যেন এগোচ্ছে কচ্ছপ গতিতে।





