২০২৩ এর এপ্রিলে দেশের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সংঘাতে জড়ায় সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি গ্রুপ র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই রক্তপাতে প্রাণ গেছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের। এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ হারিয়েছেন বসতবাড়ি।
গেল ২৬ অক্টোবর ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ আল ফাসিরের দখল নেয় আরএসএফ। নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মেরে, জীবন্ত পুড়িয়ে- অঞ্চলটিতে ত্রাসের দাসত্ব সৃষ্টি করেছে তারা। আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠছে; আর জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট চলছে সুদানে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত দুই হাজার মানুষকে মেরে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি আধাসামরিক এই বাহিনীটি। এক ভিডিও বার্তায় আল ফাসিরের পর আল-ওবেইদ শহরে অভিযানের ঘোষণা দেয় তারা। সরে যেতে বলা হয় স্থানীয়দের। এর রেশ ফুরোবার আগেই আল-ওবেইদের পূর্বাঞ্চলীয় আল-লুয়াইব গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে আরএসএফ।
আল-ওবেইদের প্রাদেশিক সরকারের তথ্যের ভিত্তিতে আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলার সময় ঐ তাঁবুতে জানাজা চলছিল। হামলায় প্রাণ গেছে নারী-শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের। নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণের ওপর চলমান এই বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে আরএসএফকে অবিলম্বে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।
আরও পড়ুন:
২০০০ সালে দারফুর বিদ্রোহীদের উপর অভিযান শুরুর পর সুদানে শুরু হয় জাতিগত সহিংসতা। দুই দশকের বেশি সময় পের আবারও সেই গণহত্যা, বিভীষিকাময় অতীতের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মন্তব্য আন্তর্জাতিক রেড ক্রস প্রধানের। আর গেল সোমবার রেড ক্রসের ৩ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর মানবিক সহায়তা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন রেড ক্রিসেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের তথ্য, গণহত্যা-গণধর্ষণের মতো ঘটনা ছাপিয়ে নতুন করে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর দারফুরের আল ফাসির ও দক্ষিণ করদোফনের কাদুগলিতে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সুদানে বাস্তুহারা হয়েছেন ৭০ হাজার ৮০০ মানুষ। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে দেড়শতাধিক শিশু।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হচ্ছে, গেল সেপ্টেম্বর থেকে দারফুর ও করদোফানে দুর্ভিক্ষের কবলে ছিল প্রায় চার লাখ বাসিন্দা। সাম্প্রতিক এ সংঘাত দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে আরও ৬৩ লাখ মানুষকে।





