আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘একমত্য কমিশন যে রিপোর্ট সাবমিট করেছে, এরইমধ্যে চারদিন পার হয়ে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম সময় এবং অবস্থা বিবেচনা করে এ সরকার সাবমিশনের পরদিনই একটা আদেশ জারি করবেন। সে আদেশের ভিত্তিতে বাকি যে কাজগুলো আছে— গণভোটের প্রস্তুতিসহ এগুলো দ্রুত গ্রহণ করবেন। সরকার কিন্তু এখনও সেটা করেনি। এর ভেতর কিছু আছে কি না, এটা আমরা বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জাতির পক্ষ থেকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অত্যন্ত জোড়ালো আবেদন, নিবেদন, দাবি পেশ করতে চাই। আপনি আর কোনো সময়ক্ষেপণ না করে জুলাই সনদের ওপরে এনসিসি যে প্রস্তাব আপনাদের কাছে জমা দিয়েছে সেটার ভিত্তিতে উনারা যেটা বলেছেন, একটা আদেশ জারি করা, অনতিবিলম্বে আপনি আদেশ জারির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এটা যদি ডিলে হতে তাকে তাহলে জনমনে আবার নানা ধারনা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হবে। আপনার সম্পর্কে, আপনার সরকার সম্পর্কেও জনগণ ধীরে ধীরে আস্থা হারাতে শুরু করবে। আর যদি এ সরকারের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে, তাহলে এ সরকারের পক্ষে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য জনগণের যে কোঅপারেশনের প্রয়োজন, সেটা কিন্তু প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে।’
আজকের মধ্যে বা আগামীকাল জুলাই সনদের আদেশ জারি করার বিষয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘আমি আবার রিপিট করতে চাই, আপনি আর সময় বিলম্ব না করে, আজকের ভেতরে হলে খুবই উত্তম, কারণ রাত ১২টা-১টায়ও এরকম আদেশ জারির নজির আছে। আর যদি আজকে না হয় কোনোভাবেই আগামীকাল আদেশ জারির ক্ষেত্রে আর দেরি করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশন সংস্কারের যে প্রস্তাব দিয়েছে, এটার আমরা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। এটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট করার লক্ষ্যে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে— দুটি প্রস্তাব, একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট, আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দিন একসঙ্গে গণভোট। আমরা প্রথম প্রস্তাবটি অত্যন্ত জোড়ালোভাবে সমর্থন করি। জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা চাই। এটি আমাদের স্পষ্ট দাবি।’
আরও পড়ুন:
তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে প্রস্তুতি চলছে এবং জাতি সে নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার ঠিক পূর্বাহ্ণেই অনেকগুলো সেটেল ইস্যুকে নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এবং মহল থেকে নানারকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার এবং ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে নির্বাচনের পরিবেশ এবং রাজনীতিতে একটা উত্তাপ ছড়ানোর পায়তারা করার চেষ্টা করছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এসময় বিএনপিকে উদ্দেশ করে জামায়তের এই নেতা বলেন, ‘একটি দল বলছে যে, তাদের নোট অব ডিসেন্টকে গণভোটে পাঠাতে হবে। তাহলে তো প্রতিটি দলের প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে গণভোটে পাঠাতে হবে। এখন নির্বাচনের আছে তিন মাস। তাহলে এরকম নোট অব ডিসেন্ট প্রতি দলের একটা একটা করে যদি পাঠায় তাহলে তো প্রতিদিনই একটা একটা করে গণভোট করার পরও আরও থেকে যাবে। এগুলো একেবারে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করার জন্য। কঠিন কঠিন বক্তব্যের আড়ালে জনগণকে আসল কথা বুঝতে না দেয়ার জন্য। এক ধরনের মেঘ তৈরি করা সূর্যের আড়ালে। সে রকম একটি অপপ্রয়াস বলেই আমরা মনে করছি।
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘গণভোট কীসের ওপরে? গণভোট হচ্ছে সংস্কারের যে চার্টার্ড তৈরি হয়েছে এবং যে সাবমিশন হয়েছে সেটার ওপরে গণভোট। এটা হচ্ছে একটা ভিন্ন সাবজেক্ট। আর জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে আলাদা ভিন্ন সাবজেক্ট, জনপ্রতিনিধি ঠিক করা, রাষ্ট্র গঠন, কারা পরিচালনা করবে সেটা করা। একটা রাষ্ট্র পরিচালনার জাতীয় নির্বাচন। আরেকটা হচ্ছে একটা সাধারণ রিফর্মস। এটা তো সবসময় হতে পারে। সো দুটিকে একসঙ্গে করে দিয়ে এক ধরনের জগাখিচুড়ি তৈরি করাটা আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতার প্রশ্নটাকে কিন্তু সামনে নিয়ে আসে।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আমি এখানে দেখতে পারছি। সেটা হচ্ছে, নির্বাচনে ফেব্রুয়ারির মাঝে আমরা সকলে মিলে চাচ্ছি। তাহলে সামনে আমাদের দুটি নির্বাচন করতে হবে। একটা গণভোটের নির্বাচন, একটা জাতীয় নির্বাচন। দুটি নির্বাচনের জন্য সময় দরকার, প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আপনি এটা মানি- মানি না। সরকার আবার কীভাবে হঠাৎ করে থমকে চুপ হয়ে আছে সেটাও কেন আমরা জানি না। তাহলে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তো সময়ক্ষেপণ করতে করতে আপনি যদি চালাকি করে এমন এক জায়গায় যান, গিয়ে বলবেন যে আর তো কোনো সময়ই নেই। তাহলে এটাও কিন্তু এক ধরনের প্রতারণার সুকৌশলে একটি সমস্যা তৈরি করার ষড়যন্ত্র হিসেবে, অপকৌশল হিসেবে এটা বিবেচিত হতে পারে।’





