নেত্রকোণায় স্কুল শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু, স্ত্রী আটক

দুর্গাপুর থানা, শিক্ষক চন্দন কুমার দাস
দুর্গাপুর থানা, শিক্ষক চন্দন কুমার দাস | ছবি: এখন টিভি
0

নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বারোমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার দাসের (৫৭) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার দুই দিন পর স্ত্রী শেলি সরকারকে (৪৬) আটক করেছে পুলিশ। আজ (বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর) বিকেলে আটকের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

এর আগে গতকাল (বুধবার, ১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে নিহত চন্দন কুমার দাসের বোন ফুলন রানী দাস বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে শেলি সরকারকে।

এর আগে গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে শিক্ষক চন্দন কুমার দাসকে গুরুতর আহত অবস্থায় দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় ও স্কুলের শিক্ষকরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, এসময় চন্দন কুমার দাসের হাত, গলা ও শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো বস্তুর আঁচড় চিহ্ন ছিলো।

পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে পাঠান। ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেসড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ঝড় শুরু হয়। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেলে বারোমারী স্কুল চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

ফুলন রানী দাস মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, চন্দন কুমার দাস দীর্ঘদিন ধরে বারোমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে তার স্ত্রী শেলি সরকার উশৃঙ্খল, বদমেজাজি ও লোভী প্রকৃতির নারী ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান নেই। প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো এবং শেলি সরকার প্রায়ই স্বামীকে মারধর করতেন।

আরও পড়ুন:

গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরদিন সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চন্দন দাস এমন খবরে কয়েকজনকে ফোন দিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলেন। স্থানীয়রা ও সহকর্মীরা হাসপাতালে নিতে চাইলে শেলি সরকার বাধা দেন। পরে বাধা উপেক্ষা করে সহকারী শিক্ষকরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শেলি সরকার পরিকল্পিতভাবে তার ছোট ভাই চন্দন দাসকে হত্যা করেছেন বলে দাবি করেন ফুলন রানী দাস। তিনি এ হত্যার সঠিক তদন্ত ও দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার দুই নম্বর সাক্ষী, বারোমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল মাস্টার বলেন, ‘স্যারের স্ত্রী শেলি রানী দাস ফোন করে জানান যে চন্দন স্যার অসুস্থ। ফোন পেয়ে আমরা দ্রুত তার বাড়িতে পৌঁছাই। তিনি কাউকে ঘরে ঢুকতে দেননি, শুধু ডাক্তার ডাকতে বলেন এবং হাসপাতালে নিতে আপত্তি জানান। পরে সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখে আমরা জোর করে ভেতরে ঢুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন দেখি স্যারের গলা ও বাম হাতে কাটা চিহ্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।’

এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘স্কুল শিক্ষক চন্দন কুমার দাস নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি শেলি সরকারকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।’

এসএস